বিয়ে উপলক্ষে খাবার অনুষ্ঠানের বিধান

| আপডেট :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০  | প্রকাশিত :  ০১ জানুয়ারি ১৯৭০, ০৬:০০

বিয়ে মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ইসলামেও বিয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিয়ের পর বরপক্ষের ভোজ অনুষ্ঠানকে ইসলামের পরিভাষায় অলিমা বলে হয়। ‘অলিমা’ আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ একত্রিত করা বা মেলানো। অলিমা করা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সুন্নত। তিনিও তার স্ত্রীদের বিয়ের পর অলিমা করে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)কে খাইয়েছেন। তাদেরও বিয়ের পর সাধ্যানুযায়ী অলিমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম সমাজে এই সুন্নত আজও চলমান আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বোখারি: ৫১৭০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাফিয়াহ (রা.)কে বিয়ের পর তিন দিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস: ৩৮৩৪)। আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আওফের গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিয়েতে বরকত দান করুক। একটি ছাগল দ্বারা হলেও তুমি অলিমা করো।’ (বোখারি: ৫১৫৫)। এসব হাদিস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট হয় যে, বিয়ের পর অলিমা করা শরিয়ত সমর্থিত। শুধু তাই নয়, বরং এটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও।

অলিমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি নয়। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। বিয়ের দুয়েক দিন পর বরের বাড়িতে বিশাল ভোজের আয়োজন করা এবং সেখানে ধনী-গরিব সর্বশ্রেণির মানুষকেই দাওয়াত করে যথাসাধ্য মেহমানদারি করা। এটাই হচ্ছে অলিমা। কিন্তু আমাদের সমাজের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, শুধু ধনীদের দাওয়াত দিয়ে তৃপ্তিসহকারে খাওয়ানো হয় আর গরিব-অসহায়দের দাওয়াতই দেওয়া হয় না। যার ফলে তারা ভীষণ কষ্ট পায়। পাশাপাশি ছিন্ন হয় সামাজিক বন্ধন। অথচ এমনটা করা সম্পূর্ণ অনুচিত। হাদিসে এমন অলিমার খাবারকে অতি নিকৃষ্ট খাবার বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ওই অলিমার খাবার অতি নিকৃষ্ট, যাতে শুধু ধনীদের দাওয়াত করা হয় ও দরিদ্রদের ছেড়ে দেওয়া হয় এবং যে বিনা ওজরে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল সে আল্লাহ ও রাসুলের নাফরমানি করল। (আবু দাউদ: ৩৭৫৪)। উল্লেখ্য, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের জন্যই অলিমা করা সুন্নত। আজকাল মেয়ের বাড়িতে যে ভোজের আয়োজন করা হয়, তা শরিয়তসম্মত নয়। বিয়েতে মেয়েপক্ষের কোনোরূপ খরচ করার কথা নয়। এরপরও যেটা করা হয়, সেটা সৌজন্যমূলক আপ্যায়ন।

বর্তমান যুগে অলিমার সুন্নত বর্জনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। বিশেষত শর্তারোপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সঙ্গে অধিকসংখ্যক লোক নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়িতে মেহমান হয়ে কনের পিতার ওপর বোঝা সৃষ্টি করা সমাজের কুপ্রথা, যা পরিত্যাজ্য। চাপের মুখে পড়ে কনেপক্ষের বাধ্যতামূলক আপ্যায়ন ও মেহমানদারি সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এতে অংশগ্রহণ করা হারাম ও পাপ কাজ। কারও ওপর জোর প্রয়োগ করে কোনো খাবার গ্রহণ করা জুলুমের শামিল।

আল্লাহতায়ালা আমাদের দীনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক চলার তওফিক দান করুন।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত