সপ্তাহে ১ দিন কাজ, ৬ দিন ছুটি—এই অবিশ্বাস্য সুযোগটি কোথায়?

| আপডেট :  ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২  | প্রকাশিত :  ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২

ভাবুন তো, প্রতি সপ্তাহে অফিস করতে হবে মাত্র এক দিন, বাকি ছয় দিন শুধুই বিশ্রাম! শুনলে অলীক কল্পনা মনে হতে পারে। কিন্তু এমন চাকরিও বাস্তবে আছে!

বিশ্ব যখন কাজ ও বিশ্রামের ভারসাম্য খুঁজছে, তখন অনেক দেশ চার দিনের অফিস ও তিন দিনের ছুটির সংস্কৃতি চালু করে ইতিবাচক ফল পাচ্ছে। কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, মানসিক চাপ কমেছে—এমনই দাবি দেশগুলোর। এমন বাস্তবতায় স্থায়ীভাবে কর্মঘণ্টা কমানোর কথাও ভাবছে অনেকে।

তবে এর মধ্যেই একটি দেশ নজির গড়েছে একেবারে ভিন্ন এক পথে—সপ্তাহে মাত্র এক দিন কাজ!

সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক অবাক করা তথ্য—প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু-তে গড়ে একজন মানুষ সপ্তাহে মাত্র ২৪.৭ ঘণ্টা কাজ করেন। হিসাব মিলিয়ে দেখা যায়, এটি কার্যত সপ্তাহে মাত্র এক দিনের কর্মঘণ্টার সমান।

এটা কি আদৌ সম্ভব? ভানুয়াতু প্রমাণ করেছে, হ্যাঁ, সম্ভব।

দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর কর্মসংস্কৃতির পেছনে রয়েছে তাদের জীবনের প্রতি গভীর দর্শন। এই দেশের মানুষ কাজের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ব্যক্তিগত সুখ, পারিবারিক সময় এবং সামাজিক সম্প্রীতি-কে। তারা মনে করে, কাজের চাপে পিষ্ট হয়ে নয়—জীবনের স্বাভাবিক গতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই কাজ করা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম কর্মঘণ্টা মানেই কম উৎপাদনশীলতা নয়। বরং, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দীর্ঘমেয়াদে তাদের কর্মদক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ে। ভানুয়াতু তার জীবন্ত উদাহরণ।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক জরিপ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এখনো বিপরীত চিত্র। ভুটানে ৬১ শতাংশ কর্মজীবী সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ভারতে ৫১ শতাংশ, বাংলাদেশে ৪৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ কর্মজীবী দীর্ঘ সময় কাজ করেন, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

অবশ্য শুধু ভানুয়াতুই নয়, আরও অনেক দেশ এখন কর্মঘণ্টা কমানোর দিকে এগোচ্ছে। আইসল্যান্ডে পরীক্ষামূলকভাবে চার দিনের অফিস চালু করে দেখা গেছে, উৎপাদনশীলতা বাড়ছে। যুক্তরাজ্য, স্পেন, নিউজিল্যান্ড এমনকি সৌদি আরবের একটি কোম্পানিও একই পথে হাঁটছে।

জীবনের মান বাড়াতে হলে শুধু অর্থ নয়, সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। ভানুয়াতুর মতো দেশগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, সুস্থ কর্মজীবনের জন্য ‘কম কাজ, বেশি বিশ্রাম’ হতে পারে ভবিষ্যতের কর্মসংস্কৃতি।

তবে প্রশ্ন হলো—আমরা কি প্রস্তুত সেই ভবিষ্যতের জন্য?

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত