শাপলা গণহত্যা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল প্রেরণা
শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশে যে গণহত্যা আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার চালিয়েছে গোটা দেশবাসী তার ন্যায়বিচার দেখার অপেক্ষায় বলে জানিয়েছেন বক্তারা। শাপলা চত্বর: শাহাদাতের রক্তে রাঙা অবিনাশী চেতনা শীর্ষক কনফারেন্সে বক্তারা এ কথা জানান।
শনিবার (২৪ মে) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, শাপলা গণহত্যা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল প্রেরণা। শাপলা স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হকের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম, সূধী সমাজ, জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিগণ।প্রোগ্রামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আন্দোলনে চালিত রাষ্ট্রীয় গণহত্যার উপর প্রামাণ্য এক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয় ও শহীদদের জীবনভিত্তিক স্মারকগ্রন্থ ‘শহীদনামা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা হাসান জুনাইদ ও মাওলানা আল আবিদ শাকিরের যৌথ পরিচালনায় কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ, তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী বশিরউল্লাহ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আহমদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান কর্নেল হাবিবুল আলম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, লেখক ও গবেষক মুসা আল হাফিজ, দিগন্ত টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক শাহীন হাসানাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু, তাকওয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক গাজী ইয়াকুব, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি আব্দুল আজিজসহ প্রমুখ জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার জীবনে কিছু সময় কেটেছে আয়নাঘরে। কিছু সময় জেলখানায়। কিছু সময় কেটেছে প্রবাসে। এভাবেই কেটেছে আমার জীবনের দীর্ঘ দেড় যুগ সময়। আল্লার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আরো কয়েকদিন বাঁচিয়ে রাখেন শাপলার বিচার দেখার জন্য।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর জুলাই অভ্যুত্থানে আলেম সমাজের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, আমরা ইউনাইটেড পড়ি গড়ে তুলতে না পারি তাহলে আমরা ব্যর্থ। এই আন্দোলন যদি আলেম-ওলামারা শরিক না হতেন তাহলে হয়তো এটা আন্দোলন সফল হতো না।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এই শাপলার ইতিহাস যদি মুছে ফেলা হয় তাহলে আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছুই মুছে ফেলা হবে। তাই এই চেতনা শুধু আমরা লালন করলেই হবে না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। তের দফা কর্মসূচি হল এদেশে যারা ইসলাম কায়েম করতে চাই তাদের সকলের দাবি। সেই জন্য আন্দোলন চলাকালীন তিন মাস আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিলাম।
আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, শাপলা চত্বর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণা। ভারতীয় আধিপত্যবাদী চাপিয়ে দেয়ার জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আলেমদের উপর জুলুম নির্যাতন এবং কারাবরণ করিয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবেলা করাই সবচেয়ে বড় প্রেম। আর এই কাজটি করেছে দেশের ওলামায়ে কেরাম।
কনফারেন্স থেকে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো:
১. রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসন: শাপলা গণহত্যার শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহীদ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষত শহীদ পরিবার ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদেরকে ভাতা প্রদান করতে হবে।
২. শাপলা গণহত্যার সত্য ইতিহাস জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।
৩.‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এ শাপলা গণহত্যাকে জাতীয় ট্রাজেডি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে।
৪. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যাচাইকৃত শহীদ তালিকা প্রস্তুত করে তা জাতীয় নথিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী এই গণহত্যার দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৬. হেফাজতে ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৭. নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘শাপলা গণহত্যা তদন্ত কমিশন’ গঠন করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও সুপারিশমালা প্রকাশ করতে হবে।
কনফারেন্স থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী ৩০ আগস্ট শাপলা গণহত্যা নিয়ে যারা সংবাদ প্রতিবেদন ও গবেষণা, সাহিত্য-রচনা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত লড়াই কিংবা স্মৃতি সংরক্ষণমূলক উদ্যোগে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন তাদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে ‘শাপলা কেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজে অংশীজনের সম্মাননা ও সম্মিলনী ২০২৫’ আয়োজন করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত