বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে বিভাগের লাভ, গ্যাসে গ্রাহকের লাভ!

| আপডেট :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:৫৯  | প্রকাশিত :  ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:৫৯

বিদ্যুতে প্রতিদিনই প্রিপেইড মিটার স্থাপন হচ্ছে। গ্যাসে আটকে আছে বেশিরভাগ কাজ। বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনে খুব একটা আগ্রহীও নয়। অভিযোগ রয়েছে— বিতরণ কোম্পানি যেকোনও মূল্যে কাজটি ঝুলিয়ে রাখতে চায়।

কারণ জানতে চাইলে বিতরণ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রিপেইড মিটার ছাড়া একজন গ্রাহককে দুই চুলার জন্য মাসে ৯৫০ টাকা বিল দিতে হয়। কিন্তু একটি ছোট পরিবারের জন্য প্রিপেইড মিটারে মাসিক খরচ গড়ে ৬০০ টাকা। প্রিপেইড মিটার লাগালে অপচয় কমবে ঠিকই, তবে বিতরণ কোম্পানির লাভ হবে না।

বিতরণ কোম্পানি সূত্র বলছে, আবাসিকে গ্যাসের যে বিল নেওয়া হয় তাতে বিবেচনা করা হয় একটি চুলা একটানা ১২ ঘণ্টা জ্বলবে। অথচ একটি পরিবারের তিন বেলার খাবার রান্নায় বড়জোর দিনে ৬ ঘণ্টা চুলা জ্বালাতে হয়। কিন্তু বিল দিতে হয় ১২ ঘণ্টার হিসাবেই।

গ্যাসের প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী মোহম্মদপুরের বাসিন্দা শাকিলা ইয়াসমিন বলেন, ‘গতমাসেই মিটার বসিয়েছে তিতাস। এখন বিল খুব কম আসছে। আমাদের দুজনের সংসার। আগে যেখানে ৯৫০ টাকা দিতাম, সেখানে এখন মাসে ৪০০-৫০০ টাকা লাগছে। সবাইকে প্রিপেইড মিটারই দেওয়া উচিত। এতে গ্যাসের অপচয়ও কমবে।’

সরকারের পরিকল্পনা হলো, ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সকল গ্যাস গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা। কিন্তু সেখানে সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির উদ্যোগও হতাশাজনক।

অনুসন্ধনে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিতরণকারীরা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯৪টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। পরিকল্পনা থেকে ঢের পিছিয়ে থাকলেও বলা হচ্ছে এই সংখ্যা খুব একটা কম নয়। কিন্তু গ্যাসে কতটি মিটার স্থাপন হয়েছে তা প্রকাশ করতেও সংকোচ বোধ করছে জ্বালানি বিভাগ।

জ্বালানি বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সব এলাকার আবাসিক গ্যাস গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনা ধরেই বিতরণ কোম্পানিগুলো কাজ করছে। তবে পরিকল্পনার আংশিকও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

জাপান সরকারের ৩৫তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজভুক্ত প্রাকৃতিক গ্যাস সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প-এর অধীনে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন হওয়ার কথা রয়েছে। জিওবি, জাইকা এবং টিজিটিডিসিএল (নিজস্ব)-এর ৭৫৩ কোটি টাকা অর্থায়নের ‘প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন’ প্রকল্পটির মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত।

তিতাস জানায়, প্রথম পর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ২০ হাজার মিটার ক্রয় ও স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।

২০২০-২১ অর্থবছরে ১০টি লটে ৬৩ হাজার ৩৬০টি মিটার জাপান থেকে আসে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাৎসরিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী জুন ২০২১ এর মধ্যে ৫০ হাজার মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। বিপরীতে মিটার স্থাপন হয় ৫৫ হাজার ৩৪৫টি।

তিতাসের মোট আবাসিক গ্রাহক ২৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৭ জন। বর্তমান গতিতে মিটার লাগানো হলে এক যুগেও সবার আঙিনায় প্রিপেইড মিটার বসবে না। এদিকে ২০৩০ সালের পর দেশীয় গ্যাস পাওয়া নিয়েও সন্দিহান সরকার। অর্থাৎ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের আগেই চুলাগুলো গ্যাস শূন্য হয়ে যেতে পারে।

গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক (ইনস্টলেশন অফ প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর টিজিটিডিসিএল) প্রকৌশলী মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘তিতাস সরাসরি কাজটি করছে না। জাইকার অর্থায়নে এখন ৩ লাখ ২০ হাজার মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। বেশিরভাগই স্থাপন হয়েছে। কিছু বাকি।’

গ্রাহকের তুলনায় মিটার এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থায়নের কারণেই ধাপে ধাপে মিটার স্থাপনের কাজ চলছে। আবার গ্রাহক নিজে চাইলেও মিটার কিনে বসাতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে। এরপর মিটার কিনে তা বিতরণ এলাকার অফিসে জমা দিলে মান যাচাই করে স্থাপন করার উদ্যোগ নেবে তিতাস।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত