ট্রাম্পের সঙ্গে বিচ্ছেদ কেন মাস্কের?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের মধ্যে একসময়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হঠাৎ করেই ভেঙে পড়েছে। দুজনের প্রকাশ্য বাকযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষ এই বিচ্ছেদের কারণ হলেও, বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে জেফ্রি এপস্টাইনকে ঘিরে থাকা ‘ফাইল’।
সম্প্রতি এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) মাস্ক লিখেছেন, এবার সত্যিকারের বড় বোমা ফেলার সময় এসেছে। ট্রাম্প জেফ্রি এপস্টাইনের ফাইলগুলোতে আছেন। এটাই আসল কারণ, এগুলো প্রকাশ করা হয়নি।
এরপর তিনি আরও একটি পুরনো ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে ট্রাম্প ও এপস্টাইনকে একসঙ্গে পার্টিতে দেখা যায়। যদিও এ পর্যন্ত মাস্ক এ বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
প্রসঙ্গত, জেফ্রি এপস্টাইন ছিলেন একজন দণ্ডিত যৌন অপরাধী। তার বিরুদ্ধে নাবালিকাদের যৌন নিপীড়ন ও পাচারের অভিযোগ ছিল এবং তিনি বহু রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও তারকাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রহস্যজনকভাবে মারা যান তিনি।
ডানপন্থী মহল দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে- এপস্টাইনকে ঘিরে থাকা গোপন নথি সরকার চেপে যাচ্ছে, কারণ এতে অনেক প্রভাবশালীর নাম রয়েছে। এবার মাস্কের এই মন্তব্য সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মাস্ক ও ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব অনেক দিন ধরেই জমছিল। বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নিয়ে মাস্কের প্রকাশ্য সমালোচনার পর সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দেন, মাস্কের সরকারি চুক্তি বাতিল করা হবে। এরপর টেসলার শেয়ারমূল্য পড়ে যায়, রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় জল্পনা- এই বিচ্ছেদের পেছনে কি আরও গভীর কিছু আছে?
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, সরকারি বাজেটে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাঁচানোর সহজ উপায় হলো ইলনের চুক্তিগুলো বাতিল করা। তবে এ কথার উত্তরে মাস্ক যে এপস্টাইনের প্রসঙ্গ টানলেন, তা অনেকের চোখে ‘চূড়ান্ত পাল্টাঘাত’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট পুরো ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বললেও, বিশ্লেষকেরা মনে করছেন এটি প্রযুক্তিকেন্দ্রিক ধনিকশক্তি ও ট্রাম্পের ‘ম্যাগা’ (মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) আন্দোলনের মধ্যে মতাদর্শিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।
মাস্কের মন্তব্য ট্রাম্পকে রাজনৈতিক ও নৈতিকভাবে চাপে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি এপস্টাইনের ফাইল নিয়ে তদন্ত বা তথ্য ফাঁসের দাবি জোরালো হয়। এখন প্রশ্ন উঠছে- মাস্ক কি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই এই অভিযোগ তুলেছেন, নাকি তিনি সত্যিই কিছু ‘অপ্রকাশিত’ তথ্য জানেন?
এদিকে, রিপাবলিকান দলের ভেতরেই এই ইস্যুতে বিভক্তি স্পষ্ট। কেউ মাস্ককে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলছেন, আবার কেউ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করছেন।
বর্তমানে, ট্রাম্পের দল বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার কৌশলে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মাস্ক যদি ভবিষ্যতে এপস্টাইনের বিষয়ে আরও কিছু প্রকাশ করেন, তাহলে এই সম্পর্ক বিচ্ছেদ শুধু দুই ব্যক্তির নয়- যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্যও বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
তথ্যসূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত