নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে দিনভর উত্তাল ইবি ক্যাম্পাস

| আপডেট :  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:০৭  | প্রকাশিত :  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:০৭


নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে দিনভর উত্তাল ইবি ক্যাম্পাস

শিক্ষা

ইবি থেকে টি এইচ জায়িম


সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)-তে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একাধিক অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুই শিবিরে বিভক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ। দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে শিক্ষকদের একাংশ ও কর্মকর্তারা। অন্যদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখার দাবি জানিয়েছে শিক্ষকদের অপর অংশ এবং শাখা ছাত্রলীগ।

এনিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের সাথে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন চত্বরে চাকরির সময়সীমা বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবিতে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার দাবি জানান। পরে তারা একই দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় তারা উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির নিয়োগ সংক্রান্ত ভাইরাল অডিও এবং ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের চ্যাটিং ফাঁসের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এসকল বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুনুর রহমান, শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্মণ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুবুল আরফীন, অধ্যাপক মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন শিক্ষকদের একাংশ।

তারাও দুর্নীতির তদন্ত চলাকালীন সময়ে নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানায়। পরে কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা বের হয়ে গেলে শিক্ষকদের আলোচনার মাঝেই ভিতরে ঢুকে পড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা নিয়োগ বন্ধের দাবিতে আসা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দালাল আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবিতে আসা শিক্ষকদের দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেন ছাত্রলীগ নেতারা। ওইসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদন না থাকলেও উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা বের হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত হন তারা। তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখতে উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানান।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবার্তাকে জানান, নিয়োগ বোর্ড নিয়ে কর্তৃপক্ষ যাদের যোগ্য মনে করবে তাদের নিয়োগ দিবে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক থাক।

পরে ভিসি বিরোধী শিক্ষকরা কার্যালয় থেকে বের হয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে মানববন্ধন করেন। বক্তব্যে তারা তদন্ত চলাকালীন সময়ে সকল নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবি জানান। তারা বলেন, ‘ছাত্রলীগকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য।’ তবে উপাচার্য এই বক্তব্য নাখোশ করে বলেন, ‘শিক্ষকদের সাথে আলোচনা চলাকালীন ছাত্রলীগের প্রবেশ অনাকাঙ্খিত। তাদের এভাবে প্রবেশ করা উচিত হয়নি।’

এদিকে মঙ্গলবার অনুষ্ঠাতব্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম পদে নিয়োগ বোর্ডে অংশগ্রহণের জন্য আসা চাকরি প্রার্থীদের প্রশাসন ভবন থেকে বের করে দেয় কর্মকর্তারা। পরে প্রার্থীদের নিয়োগ বোর্ড উপাচার্যের বাংলোয় অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুনুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের তদন্ত চলাকালীন সময়ে প্রক্রিয়া চলমান রাখা একটি দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত। আর এখানে আমাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। পরবর্তীতে আলোচনাক্রমে আমরা আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের একটি পক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এ পক্ষের শিক্ষকদেরই বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তারা দুর্নীতি করার সুযোগ না পেয়ে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার দাবি জানাচ্ছে। যাতে পরবর্তীতে তারা দায়িত্বে এসে উক্ত পদে নিয়োগ বাণিজ্য করতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বিবার্তাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছে, সেই অভিযোগ প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদেরই। আমি কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। আমি আমার জায়গায় স্বচ্ছ আছি।

বিবার্তা/রোমেল/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত