পদ্মা সেতু পার হতে টোল দিতে হবে ১০০ থেকে ৬ হাজার টাকারও বেশি

| আপডেট :  ২১ এপ্রিল ২০২২, ০১:৪৫  | প্রকাশিত :  ২১ এপ্রিল ২০২২, ০১:২৬

পদ্মা সেতু। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতু পার হতে লাগবে বড় অঙ্কের টোল। বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যে টাকা লাগে, সেতু পার হতে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে। পদ্মা সেতুতে প্রস্তাবিত টোলহার কার্যকর হলে বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাঝারি ট্রাকে লাগবে ২ হাজার ৮০০ টাকা।

বর্তমানে পদ্মা নদী পার হতে ফেরিতে যানবাহনভেদে ভাড়া দিতে হয় ৭০ থেকে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা। প্রস্তাব অনুসারে পদ্মা সেতুতে যানবাহনভেদে টোল দিতে হবে ১০০ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে কার ও জিপের টোল ৭৫০ টাকা (ফেরিতে ৫০০ টাকা), বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৫৮০ টাকা), মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৮৫০ টাকা)।

সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মাস ছয়েক আগে পদ্মা সেতুর জন্য টোলহারের ওই প্রস্তাব তৈরি করেছে সেতু বিভাগের একটি কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন দেবে সেতু বিভাগ। খসড়া যে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কমানোর সম্ভাবনা কম। প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দেবেন বলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট (দুই প্রান্তের উড়ালপথ) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর সময় টোলের হার ছিল বেশ কম। ২০১১ সালে এবং সর্বশেষ গত বছর টোল বাড়ানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোলহার বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় দ্বিগুণ।

বর্তমানে পদ্মা নদী পার হতে ফেরিতে যানবাহনভেদে ভাড়া দিতে হয় ৭০ থেকে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা। প্রস্তাব অনুসারে পদ্মা সেতুতে যানবাহনভেদে টোল দিতে হবে ১০০ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে কার ও জিপের টোল ৭৫০ টাকা (ফেরিতে ৫০০ টাকা), বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৫৮০ টাকা), মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা (ফেরিতে ১ হাজার ৮৫০ টাকা)।

মালবাহী ট্রেইলারের (চার এক্সেল) ভাড়া ফেরিতে নির্ধারণ করা নেই। বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই শ্রেণির ট্রেইলারের টোল তিন হাজার টাকা। পদ্মা সেতুতে তা ৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত টোলহার সেতু চালুর ১৫ বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে। প্রতি ১৫ বছর পরপর টোলের হার ১০ শতাংশ করে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

পদ্মা সেতু দিয়ে কত যানবাহন চলাচল করবে—এর পূর্বাভাস আগেই ঠিক করা হয়েছে। ওই পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে সেতু চালুর হিসেবে দিনে প্রায় ৮ হাজার যানবাহন চলাচল করার কথা ছিল। ৩৫ বছর পর যানবাহনের সংখ্যা দিনে ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, চুক্তি অনুসারে প্রথম বছরই সেতু বিভাগকে ৬০০ কোটি টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এই সময়ে টোল থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। টোল আদায়ের জন্য ঠিকাদারের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকার বেশি। ফলে শুরুতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হবে।

সড়কেও টোল লাগবে
পদ্মা সেতুর বাইরে ঢাকার পোস্তগোলা বা বাবুবাজার থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে (ছয় লেনের দ্রুতগতির সড়ক) ব্যবহারের জন্যও টোল দিতে হবে। আগামী জুলাই থেকে টোল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সড়কের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

সওজ সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য একটি বাসে প্রতি কিলোমিটারে ৯ টাকা হারে টোল দিতে হবে। মাঝারি একটি ট্রাকের টোল হবে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা। এ ক্ষেত্রে পোস্তগোলা, কেরানীগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীতে দুটি সেতুসহ বাকি সেতুতে আলাদা টোল নেওয়া হবে না। বর্তমানে এই পথে তিনটি সেতুর জন্য একটি বড় বাসে গড়ে ২০০ টাকা টোল দিতে হয়।

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। সে হিসাবে প্রতিটি বাসে ৪৯৫ এবং ট্রাকে সাড়ে ৫০০ টাকা টোল দিতে হবে। তবে এই টোলহার আরও বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে সওজের। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে খরচ হয়েছে ১১ হাজার ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত