ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থতা, বাইডেনের দুর্বলতার খেসারত দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
মানসপটে শীতল যুদ্ধের অভিজ্ঞতা এখনো প্রবল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। তবে ঝানু রাজনীতিক রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পেরে উঠছেন না তিনি। বাইডেনের দুর্বল সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর হুঙ্কার দিয়েছিলেন বাইডেন। একই বছরের মার্চে পুতিনের জন্য লাল রেখা এঁকে দেন তিনি। তবে তাতে মোটেও কাজ হয়নি। উল্টো ইউক্রেনে নিজেদের পরাজয় দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রে চলছে যুদ্ধ। ইউক্রেনকে অস্ত্র, অর্থ সহায়তা এমনকি ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমারা। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক বেড়ি পরিয়েছে তারা। কিন্তু রুবলকে মাটির সঙ্গে মিটিয়ে দেওয়ার সেই প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন বাইডেন। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও দেশটিকে সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সংঘাত প্রশমনে বাইডেনের সেই কৌশল মারত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইউক্রেন সংকট এখন আমেরিকার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দিন যত গড়াচ্ছে, এই যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। হয়ে উঠছে আরও ধ্বংসাত্মক। যাকে স্পর্শ করছে, তাকেই টেনে নিচ্ছে এই যুদ্ধে। যদিও রাশিয়া এবং ন্যাটো এখনো পর্যন্ত যুদ্ধে জড়ায়নি। তবে পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ ছুটে যাওয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও মেরিটাইম হামলার মতো ঘটনা ঘটছে।
উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে পুরো কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল। প্রচ্ছন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে আছে বেলারুশও। পুতিন তো এরই মধ্যে বলেই দিয়েছেন, পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। এজন্য তিনি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও দিয়েছেন। নতুন এই সংকটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, পুরো ইউরোপে আর কেউই যেন নিরাপদ নয়।
চলমান এই যুদ্ধ ইউরোপের সামনে নতুন একটি চেহারাও ফুটিয়ে তুলেছে। গেল সপ্তাহে মলদোভা সেই ঝাঁজ টের পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত হওয়ার জন্য ভোটাভুটিতে নাটকীয় ফলাফলের পর ইউরোপে রাজনৈতিক চরমপন্থা উত্থানের বিষয়টি নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। শুধু মলদোভাই নয়, জর্জিয়ায়ও নিজের প্রভাব বিস্তার করছে রাশিয়া। শুধু ইউরোপ নয় যুদ্ধ দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় রাশিয়া নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করেছে।
পশ্চিমা আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে চীনের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাশিয়া। ইরানের সঙ্গেও মাখামাখি বেড়েছে দেশটি। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, আবার ন্যাটোর সদস্য তুরস্কের সঙ্গেও সম্পর্ক গভীর করেছেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এক জোট হচ্ছে তথাকথিত গ্লোবাল সাউথ। পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ব্রিকসের মতো জোট গঠনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে রাশিয়া।
এই নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা যুক্ত হচ্ছে, দ্বিতীয় সারির বিভিন্ন দেশ। বিশেষ করে ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমারা যতটা সরব, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ততটাই নীরব তারা। এ ধরনের দ্বিচারিতায় হালে পানি পাচ্ছে রাশিয়া। বাড়ছে নতুন নতুন বন্ধু। ৭৫ বছর আগে কোরিয়ান যুদ্ধে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের বদলা এবার উত্তর কোরিয়ার সেনারা রাশিয়ার হয়ে লড়ছে ইউক্রেনে। এমনটা হয়ত স্বপ্নেও ভাবেনি যুক্তরাষ্ট্র।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত