নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে

| আপডেট :  ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩  | প্রকাশিত :  ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩

নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নে তথ্য প্রাপ্তির সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণে নারী ও প্রান্তিকজনের অংশগ্রহণে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে আমাদের সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।

মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে গুলশানের একটি হোটেলে দ্য কার্টার সেন্টার এবং  মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) কর্তৃক আয়োজিত ‘তথ্য অধিকার প্রাপ্তিতে নারীর অগ্রগতি প্রকল্প’-এর (এডব্লিউআরটিআই) বার্ষিক শিক্ষণ সম্মেলন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। তিনি এই প্রকল্পের মাধ্যমে তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য তথ্যের অধিকার আইনবিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজনের আহ্ববান জানান ।

শারমীন এস মুরশিদ নারীদের জন্য তথ্য প্রাপ্তির অধিকারের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, আমাদের সমাজে সবচেয়ে ঝুঁকিগ্রস্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই সাধারণত তথ্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত থাকে। যার ফলে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী পর্যাপ্ত তথ্য থেকে বঞ্চিত থাকে। তথ্য প্রাপ্তি থেকে উদ্ভূত নানা সুযোগ -সুবিধা ভোগ করতে পারে না । এর মধ্যে দারিদ্র্যতা ও স্বল্পশিক্ষা নারীদের সংখ্যাই বেশি। নির্যাতনের শিকারেও নারীরা  ভুক্তভোগী।

তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনটি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে  তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে সমাজ থেকে সকল অন্যায় ও দুর্নীতিমুক্ত  উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

শারমীন এস মুরশিদ ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের যুবসমাজ এবং জনগণের ত্যাগের কথা স্মরণ করানোর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের জাতি পুনর্গঠনের জন্য আরও একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি গোপনীয়তার সংস্কৃতি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে সকলকে তথ্য প্রকাশকে উৎসাহিত করার অনুরোধ জানান। তিনি আরও বলেন, ‘যখন তথ্য সহজলভ্য হয় না, তখন ভুল তথ্য সহজেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’

এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম প্রকল্পটির গুরুত্ব তুলে ধরে উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘এই উদ্যোগটি প্রমাণ করে, যখন নারীরা তথ্য অধিকার পায়, তারা শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতায়ন করে না, বরং তাদের পরিবারে পরিবর্তনও আনে, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের মধ্যে। জেন্ডার বৈষম্য নারীর অধিকার লঙ্ঘন করে এবং এই প্রকল্পটি তথ্য অধিকার আইন (আরটিআই) এর মাধ্যমে তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়ে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। তথ্য অধিকার আইন এমন একটি আইন, যা নাগরিকদের সমাজে অর্থবহ অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়।’

কার্টার সেন্টারের চিফ অব পার্টি সুমনা সুলতানা মাহমুদ প্রকল্পের গত বছরের শিক্ষণ উপস্থাপন করেন। গত বছর প্রকল্পটি ছয়টি জেলায় পরিচালিত হয়। তথ্য অধিকার নিয়ে দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে ৬৪ জন সরকারি প্রতিনিধির মধ্যে সংলাপের সুযোগ সৃষ্টি করে। জেন্ডার ও তথ্য অধিকার বিষয়ে ১৪৬ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ১৩০ জন সরকারি কর্মকর্তা এবং ২৩ জন নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। মোট ৩৪৪টি উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যেখানে ৪ হাজারেরও বেশি নারী অংশগ্রহণকারী অংশ নেন। এছাড়াও, ১ হাজার ৩৬৯টি তথ্য অধিকার আবেদন দাখিল করা হয়। যার মধ্যে ১ হাজার ২০৫টি (৮৮ শতাংশ) আবেদন নারী কর্তৃক দাখিলকৃত।

ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড গভর্নেন্স অফিসের পরিচালক এলেনা ট্যান্সি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অর্জনের জন্য তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউএসএআইডি মনে করে তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ হলো ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নারীরা স্বভাবতই শক্তিশালী এবং তাদের ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্তকারী প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা আমাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশের মানুষ স্বভাবতই কৌতূহলী এবং নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করেন। এই জ্ঞান বিনিময়কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া উচিত, যাতে নারীরা আরও ক্ষমতায়িত হতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, তথ্য অধিকার (আরটিআই) নিয়ে আমরা সবাই একটি সম্মিলিত যাত্রার অংশ। বৈষম্য দূর করতে এবং সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের তথ্যের অধিকার আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, এসব আলোচনার জন্য স্থান নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমরা এখনো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের সমাজে এখনো স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রকাশের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে হবে। আজকের পৃথিবীতে তথ্যই ক্ষমতা; তাই বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাদের তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের পরিচালক এস এম কামরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, এই দেশের প্রকৃত মালিক হলো জনগণ। সুতরাং, যখনই মালিকেরা তথ্য জানতে চান, তখন দেশের সেবকদের সেই তথ্য প্রকাশ করা উচিত। যদিও তথ্য অধিকার আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধিতে আমাদের সবারই কাজ করা প্রয়োজন।

রাজশাহী, সাতক্ষীরা, খাগড়াছড়ি ও সিলেট অঞ্চল থেকে চারজন উপকারভোগী তাদের জীবনের পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত