‘প্রত্যেক জনপ্রিয় সরকারই ক্ষমতার দিক থেকে শক্তিশালী’
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ও আইএফআরসির গভর্নিং বোর্ডের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জেনেভার আইএফআরসি সাধারণ পরিষদে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছিলেন। তারা ব্যক্তিগতভাবে দুটো কথা আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ যে বিপ্লব ঘটিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রত্যেক জনপ্রিয় সরকারই ক্ষমতার দিক থেকে শক্তিশালী হয়। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস এর দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি খুবই দয়ালু মানুষ। তারা আশা করছেন, বাংলাদেশের মানুষকে যাতে আর এ ধরনের শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আর পড়তে না হয়। তারা আমাদের দেশের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সদ্য সমাপ্ত আইএফআরসির সংবিধিবদ্ধ সভায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অংশগ্রহণ, আলোচ্য বিষয়বস্তু ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ও আইএফআরসির গভর্নিং বোর্ডের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল ২১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইএফআরসির জেনারেল অ্যাসেম্বলি, কাউন্সিল অফ ডেলিগেটস এবং ৩৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের ১৯১টি সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রতিনিধিদল জাতীয় সোসাইটির প্রতিনিধিত্ব করে। জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিল অব ডেলিগেটস এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ড. কবির এম আশরাফ আলম এনডিসি, উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক আরিফা এম সিনহা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে সরকার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে একটি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সে হিসেবে সকলের গ্র্যাচুইটি পাওয়ার কথা। কিন্তু কেউ তা পাননি। আমরা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তাদের গ্র্যাচুইটি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এদিকে ৮ বছরের বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে। নীতিগতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নীতিমালা অনুযায়ী আমরা কতভাগে দিবো। কতটা পরিশোধ করতে পারব। কাযকলাপ শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে রাজধানীতে ২৫ বিঘা জমির উপর স্বনামধন্য হলিক্রস হাসপাতাল। অথচ এই হাসপাতাল রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। হলিক্রস হাসপাতালের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯৭ কোটি টাকা। এর দায়টা আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, আর্থসামাজিক সংকট ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিগত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ ১২লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান করছে বলে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে অবগত করেন তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সেবা দিয়েছেন। সম্প্রতি আইএফআরসি’র সহযোগিতায় ডা. অভিষেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইউরোপ-ভারতের মেডিকেল যন্ত্রপাতি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা করছি। প্রায় ১১০০ ছাত্র-জনতা যারা হাত-পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসাসহ ফিজিওথেরাপিও দিবো। এজন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এছাড়া আহত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সপ্তাহে দুদিন মানসিক স্বাস্থ্য সেবা একজন মনোচিকিৎসক দিচ্ছেন। এবং ওষুধ দিচ্ছেন।
আমাদের প্রশিক্ষিত ৪ লক্ষাধিক যুব স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। যারা বিভিন্ন দুযোগে সেবা দিয়ে থাকেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ঢাকাসহ জেলাগুলোতে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। এছাড়াও পরবর্তীতে তাদের যদি স্বেচ্ছাসেবক দরকার হয়, স্থানীয় ভিত্তিতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সেবা করেছেন। পিজি হেলথ, সরকারের সাথে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি।
এ বছর সম্মেলনে ৯টি প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং মূল প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। প্রস্তাবনায় প্রয়োজনীয় মানবিক সংকট মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দুর্যোগে সুরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধি, আগাম সতর্কতা, মানবিক সাড়াদান পদ্ধতি উন্নত করা এবং অভিবাসন কৌশল ২০২৪-২০৩০ গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও আলোচনা হয়- আন্তর্জাতিক মানবিক আইন (আইএইচএল) মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা সশস্ত্র সংঘাতের সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) অপপ্রচার থেকে বেসামরিক নাগরিক এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা।
সুসংহত আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। নীতিগত মানবিক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় নেতৃত্ব, সক্ষমতা ও বিতরণ এবং স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা। জলবায়ু এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করা। ডেলিগেট কাউন্সিলে দুর্যোগের প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে মাউন্টিং বিবেচনা করা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি এবং এক মিলিয়নের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা মিয়ানমার বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম জোর দেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যাকে সাহায্য করার জন্য সম্মিলিত দায়িত্বের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে সমাধানের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত