জবি শিক্ষককে হত্যার হুমকির অভিযোগ, থানায় জিডি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন ওই শিক্ষক। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কোতোয়ালি থানাতেও জিডি করেন তিনি।
উপাচার্যকে দেওয়া আবেদনে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেন, গণঅভুত্থ্যানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকরিবিধি অমান্য করে দেশ থেকে পলায়ন করে বর্তমানে আস্ট্রেলিয়া অবস্থান করছে কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লা। বিদেশে অবস্থান করে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।
ওই শিক্ষক জানায়, সে (সালাউদ্দিন মোল্লা) অভিযোগ করে আমি (জাহিদুল হক), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা শিক্ষা কেন্দ্রের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরকে পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছি। সে (সালাউদ্দিন) নিজেকে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশানী লোক বলে পরিচয় দেয় এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করে।
শিক্ষক জাহিদুল হক জানায়, মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হুমকি প্রদান, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজি, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পে পুটপাট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের হেনস্তা ও নির্যাতনের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীরা তার বরখাস্তের দাবি করে আসছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া কমিটির একজন সদস্য হিসেবে গত ১২ নভেম্বর ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদালয় ৭ম আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০২৪’ চলাকালে আমি খেলা পরিদর্শনে যাই। ধূপখোলা মাঠে মো. আব্দুল কাদেরকে পুষ্পেন সরকারসহ (ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর, শরীরচর্চা শিক্ষা কেন্দ্র) বেশ কয়েকজন স্টাফের সঙ্গে বাসে থাকতে দেখি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া কমিটি ও বিভিন্ন ক্রীড়া উপকমিটির কোনো কার্যক্রমেই তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়নি। আরপরও মাঠে তার উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করলে তারা আমাকে বিষয়টি অবগত করে যেহেতু আমি একই সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য (সহকারী প্রক্টর)। আমি বিষয়টি বর্তমান প্রক্টর ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হককে ফোনে অবগত করি। তিনি কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরকে মাঠ ত্যাগ করতে কলার জন্য আমাকে পরামর্শ দেন। আমি প্রক্টরের নির্দেশমতো মো. আব্দুল কাদেরের কাছে গিয়ে দেখি সেখান থেকে চলে গেছে এবং যেখানে পুষ্পেন সরকার বসে আছে। তখন আমি তাকেই প্রক্টরের নির্দেশনা জানিয়ে দিই এবং পরে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলি।
ওই শিক্ষক বলেন, উল্লেখিত ঘটনা বিদেশ পলাতক সালাউদ্দিন মোল্লার কাছে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ানোর পেছনে মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির এবং সেই সঙ্গে সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ময়নাল হক, উপপরিচালক গৌতম কুমার দাস দায়ী।
অভিযোগ পত্রে শিক্ষক জাহিদুল হক উল্লেখ করেন, হুমকিদাতা সালাউদ্দিন মোল্লা বিদেশে অবস্থান করায় ক্যাম্পাসের ঘটনা তার কাছে কেউ রিপোর্ট না করলে জানার কোনো উপায় নাই, তাছাড়া হুমকিদাতা আমার পূর্বপরিচিত নয় এবং তার সঙ্গে আমার পূর্বে কোনো ব্যক্তিগত বিরোধও নেই। সে মো. আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরের হয়ে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক জাহিদুল হক বলেন, হুমকিদাতা কর্মকর্তার সঙ্গে আমার আগে কখনো যোগাযোগ ছিল না। চিনিও না। হঠাৎ করেই সে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অবশ্যই তাকে কাজী মনির জানিয়েছে। তার সঙ্গে আমার কোনো পার্সোনাল সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিল না। আমি থানাতেও জিডি করেছি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি অভিযোগ আছে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। প্রক্রিয়াধীন আছে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, সরকার পতনের পর দেশ ছাড়েন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লা। তিনি সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির রাজনীতি করতেন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হওয়াতে দীপু মনির সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সম্প্রতি দেশের বাইরে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ সমালোচনা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত