স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া মামলা, স্ত্রীসহ ৩ জন পুলিশ হেফাজতে

| আপডেট :  ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫  | প্রকাশিত :  ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় নিজের স্বামীকে মৃত দেখিয়ে করা ভুয়া মামলার বাদীসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে কক্সবাজার থেকে তাদের হেফাজতে নেয় আশুলিয়া থানা পুলিশ।

পুলিশ হেফাজতে থাকা কুলসুম আক্তার (২১) মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার সিংজুরীর আব্দুল খালেকের মেয়ে। অপর দুজন হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার শিবালয় থানার টেপড়া এলাকার মৃত মনসের আলীর ছেলে শফিউদ্দিন (৪০) ও একই জেলার মৃত মাসুম আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৬৪)।
 
কুলসুম জানান, স্বামী মো. আল আমিনের সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় থাকতেন মামলার বাদী কুলসুম বেগম। আল আমিনের বাবা নুর নবী ও মা কমলা বেগম। গত ২৮ আগস্ট সিলেট থেকে মানিকগঞ্জে চলে আসেন তিনি। আসার পথে বাসে পরিচয় হয় শফি উদ্দিনের সঙ্গে। সেখানেই আলাপচারিতার এক পর্যায়ে চাকরির প্রয়োজনের কথা শফি উদ্দিনকে জানান তিনি। আদান-প্রদান হয় মুঠোফোন নম্বর। এরপর কুলসুমের চাকরি হয়েছে অবহিত করে তাকে জন্মনিবন্ধন ও চেয়ারম্যান সনদ পাঠাতে বলেন সফি উদ্দিন। এর কিছু দিন পর কুলসুমকে সফি উদ্দিন ও রুহুল আমিন জানান, কুলসুমকে ৫ আগস্ট এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় করা মামলায় বাদী করা হয়েছে। এছাড়া কুলসুমকে নিহত ব্যক্তিকে স্বামী হিসেবে সবার কাছে পরিচয় দিতে বলেন অন্যথায় কুলসুমের ফাঁসি হবে বলে জানান। পরে আদালতে নিহত ব্যক্তি তার স্বামী বলে জানান। এরপর থেকে তারা কুলসুমকে কক্সবাজার নিয়ে রাখেন। কুলসুম একবার বাড়ি ফিরলেও পরে শফিউদ্দিন ও রুহল আমীন আবারও তাকে কক্সবাজার নিয়ে যান। পরে আশুলিয়া থানা পুলিশ কুলসুম, রুহুল আমীন ও শফিউদ্দিনকে হেফাজতে নেয়। 

কুলসুম বেগম বলেন, চাকরির প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে আমাকে মামলার বাদী করা হয়। আমি আসামি কাউকে চিনিও না। কে মারা গেছে আমি জানিও না। 

শফিউদ্দিন বলেন, বাসে কুলসুমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার চাকরির প্রয়োজন জানালে মোবাইল নম্বর দেই। চাকরির সুবাদে রুহুল আমিনের সঙ্গে কুলসুমকে পরিচয় করিয়ে দেই। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

জীবিত স্বামীকে মৃত বানিয়ে করা মামলার বাদী কুলসুমকে থানায় আনা হয়েছে শুনে থানায় আসেন লিয়াকত দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি। তার দাবি, মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করতে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। লিয়াকত দেওয়ান বলেন, আমি ওই মামলার ৫৭ নম্বর আসামি। একটি মাধ্যমে জানতে পারি এ ঘটনায় রুহুল জড়িত। পরে রুহুলের ছেলে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একজনের মাধ্যমে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা চায়। পরে আমরা ১১ জন মিলে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছি। 

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মামলার বাদীসহ আরও দুজনকে কক্সবাজার থেকে আশুলিয়া থানায় আমাদের হেফাজতে আনা হয়েছে। বাদীকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কুলসুম বেগম (২১) নামে এক নারী। মামলাটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়।

এজাহারে তিনি গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার স্বামী মো. আল আমিন গুলিতে নিহত হন বলে দাবি করেন। তবে গত ১৩ নভেম্বর আল আমিন নামে এক ব্যক্তি কুলসুমের স্বামী পরিচয় দিয়ে থানায় যোগাযোগ করেন। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানা পুলিশ তার জবানবন্দি নেয়।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত