নিজে নিজে আবেদন করে কানাডা যাওয়ার উপায়

| আপডেট :  ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২২  | প্রকাশিত :  ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২২

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর একটি কানাডা। শিক্ষা জীবন শেষে অনেক উন্নত দেশেই চাকরি কিংবা নাগরিক সুবিধার পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য প্রথম পছন্দ কানাডা। আপনি যদি পড়ার জন্য কানাডায় যেতে চান, তবে এ লেখাটি আপনার জন্য। তাহলে জেনে নিন নিজে নিজে আবেদন করে কানাডা যাওয়ার উপায়গুলো-

নির্দিষ্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন :

আপনি যদি এখনো কানাডার কোথায় পড়বেন তা ঠিক করতে না পারেন, তবে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন, কোথায় পড়বেন। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার ছাড়া আপনি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

আপনার যদি নির্দিষ্ট একটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়, তবে নিচের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন-

১. ইউনিভার্সিটি অব আলবারটা অ্যাডমনটন।

২. ইউনিভার্সিটি অব মনট্রিয়েল।

৩. ডালহাউজ ইউনিভার্সিটি, হেলিফ্যাক্স।

৪. ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া ভ্যাকুভর।

৫. ইউরক ইউনিভার্সিটি, টরেন্টো।

৬. ইউনিভার্সিটি অব স্যাসকেচুয়ান, স্যাসকেটন।

৭. ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে মনস্থির করুন। তারপর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবে প্রদত্ত আবেদন করার নিয়ম অনুসারে আবেদন করুন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার সংগ্রহ করুন।

স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করুন :

কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা নামে কোনো ভিসা দেওয়া হয় না। মূলত, স্টাডি পারমিট দেওয়া হয়, যেটাকে স্টুডেন্ট ভিসা বলা হয়। এই স্টাডি পারমিট দিয়ে আপনি কানাডায় বসবাস করতে পারবেন না। কানাডায় ভ্রমণ ও বসবাসের জন্য আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথোরাইজেশন (ইটিএ) নামক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

স্টাডি পারমিট মূলত আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সের মেয়াদের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কোর্সের মেয়াদ যদি চার বছর হয় তাহলে আপনার স্টাডি পারমিটের মেয়াদও চার বছর হবে। সঙ্গে অতিরিক্ত ৯০ দিন দেওয়া হবে, যাতে আপনি ধীরেসুস্থে কানাডা ত্যাগ করতে পারেন।

আপনার স্টাডি প্রোগ্রাম যদি ৬ মাস কিংবা তারচেয়ে কম সময়ের হয়, তাহলে আপনাকে কোনো ধরনের স্টাডি পারমিট নিতে হবে না। যদি আপনার পরিবারের কেউ কানাডা থেকে থাকেন, তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না। একইভাবে আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কারো যদি রেজিস্টার্ড ইন্ডিয়ান স্ট্যাটাস থেকে থাকে, তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না।

স্টাডি পার্মিটের জন্য আবেদন :

কানাডার স্টাডি পার্মিটের জন্য সর্বপ্রথম সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার (CIC) ওয়েবে অনলাইনে আবেদন করুন। অথবা, নিকটস্থ কানাডিয়ান অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করে অফলাইনে আবেদন করুন।

আবেদনের জন্য আপনাকে যা যা সংযুক্ত করতে হবে :

১. কানাডার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার।
২. কানাডায় থাকাকালীন আপনার থাকা, খাওয়া ও পড়ার খরচ বহন করার মতো পর্যাপ্ত আর্থিক জোগান রয়েছে তার প্রমাণপত্র।
৩. আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নেই তার প্রমাণপত্র।
৪. আপনি পুরোপুরি সুস্থ তার প্রমাণ হিসেবে মেডিকেল রিপোর্ট।
৫. কানাডায় থাকাকালীন আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবেন না, তার অঙ্গীকারনামা।
৬. আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর/ইংরেজি ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার স্কোর।

কানাডায় থাকাকালীন আপনার খরচ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক জোগান রয়েছে তার প্রমাণপত্র হিসেবে যুক্ত করুন-
১. কানাডার ব্যাংকে আপনার নিজের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
২. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৩. ব্যাংক ড্রাফট।
৪. এক বছরের থাকা ও পড়ার খরচ পরিশোধ হয়েছে, তার প্রমাণপত্র।
৫. যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনার ফান্ডিং দিবে, সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত চিঠি।
৬. আপনি যদি কোনো স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন, তবে তার প্রমাণপত্র।

এসব কিছু সংযুক্ত করে স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করতে আপনার খরচ হবে, ১৫০ কানাডিয়ান ডলার বা ৮৬১০ টাকা।

এছাড়াও স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করার পর নিকটস্থ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলে পাঠাতে হবে। এজন্য ১৪০০০ থেকে ১৭০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।

আবেদন করার পর যা করবেন :

স্টাডি পারমিটের আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে চিঠি অথবা মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, আপনার জন্য বায়োমেট্রিক ইনফরমেশনের দরকার পড়বে কিনা। যদি দরকার পড়ে, তবে উপরে বর্ণিত নির্দেশনার মাধ্যমে বায়োমট্রিক ইনফরমেশন পাঠিয়ে দেবেন।

তারপর আপনার আবেদন ফর্ম যাচাইবাছাই করে দেখা হবে। যদি অসম্পূর্ণ তথ্য কিংবা কোনো অতিরিক্ত ডকুমেন্টে সমস্যা থাকে, তবে তারা আপনাকে তা জানিয়ে দেবেন। বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে কিংবা আরও কিছু তথ্য পাঠানোর জন্য বলা হতে পারে।

যদি তারা আপনার আবেদন ফর্ম গ্রহণ করেন, তবে তারা আপনাকে একটি কনফার্মেশন লেটার পাঠাবেন। এই কনফার্মেশন লেটার কানাডা পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন অফিসে দেখাতে হবে।

আর যদি তারা আপনার আবেদন ফর্ম গ্রহণ না করেন, তবে তারা আপনাকে এর কারণ  জানিয়ে মেইল পাঠাবেন।

টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করুন : 

স্টাডি পারমিট পাওয়ার পর আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসার জন্য আবেদন করতে আপনার যা যা লাগবে-

১. নির্ভুলভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র।

২. ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত অফার লেটারের মূল কপি।

৩. চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

৪. আপনার কোর্সের সময়সীমার চেয়ে এক মাস বেশি মেয়াদের পাসপোর্ট।

৫. আপনার সব জাতীয় কাগজপত্র, যেমন: জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা পরিচয়পত্র ইত্যাদি।

৬. আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র।

৭. আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ।

৮. স্পন্সরের প্রমাণসহ বিস্তারিত তথ্য।

৯. স্টাডি পারমিট ফি দেওয়া হয়েছে- তার প্রমাণপত্র।

১০. ভিসা এনরোলমেন্টের ইলেকট্রনিক কনফার্মেশনের স্ক্যান কপি।

উপরের কাগজপত্রসহ কানাডিয়ান টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে কানাডিয়ান অ্যাম্বাসিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যে আপনি হাতে পেয়ে যাবেন আপনার স্বপ্নের দেশের ভিসা। সূত্র : ইয়ুথ কার্নিভাল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত