‘সফট পাওয়ার’ কৌশলে হাসিনার জন্য লবিং করছে কাজী আনিস পরিবার
ঢাকা লিটফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা আহসান আকবার বলেছেন, ‘সফট পাওয়ার’ কৌশলে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার জন্য লবিং করছে কাজী আনিস পরিবার। দেশকে জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে পরিবারটি অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘সফট পাওয়ার, হার্ড অ্যাবিউজ : আওয়ামী লীগের মিডিয়া মাফিয়া’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
আহসান আকবার বলেন, স্থানীয় মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (পরবর্তীতে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট) প্রয়োগের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সফট পাওয়ার প্রচারের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল বিগত সরকারের আমলে। বাংলাদেশ সীমান্তের বাইরেও এই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক লবিস্ট নিয়োগ, মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সন্দেহজনক সদস্যকে অর্থ প্রদান, পক্ষপাতমূলক মতামত প্রকাশ করা, সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ দখল ও ঢাকা লিটফেস্ট প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার এরই উদাহরণ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ভুল তথ্য প্রচার ও অনেক মিথ্যা বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছিল যা মুসলিমবিরোধী, হিন্দুত্ববাদী ও জায়নবাদী হিসেবেও পরিচিত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে লাখ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছিল, যা বাংলাদেশের আইনে অর্থ পাচারের শামিল।
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বিপজ্জনক অস্ত্র, ‘সফট পাওয়ার’ উল্লেখ করে ঢাকা লিটফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সফট ন্যারেটিভ প্রচারের প্রচেষ্টা। ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের এক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে লিবার্টি সাউথ এশিয়া নামের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়, যার অর্থ দেওয়া হয়েছিল দুবাইভিত্তিক গ্রিন পার্সপেক্টিভ নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে। কোম্পানিটি চা, কফি ও স্ন্যাকস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত।
দ্য সানডে টাইমসের (ইউকে) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আহসান আকবার বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারকে নিযুক্ত করেছিলেন। এ ছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয় স্ট্রাইক গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসি (এসজিডি) ও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন প্রধান সচিব আহমদ কায়কাউস মোরান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিসকে (এমজিএস) আন্তর্জাতিক প্রপাগান্ডা চালাতে অর্থ দিয়েছিলেন।
‘সিআরআই নামের যে প্রপাগান্ডা সংস্থাটি প্রাক্তন একনায়ক শেখ হাসিনার ভাগনের নেতৃত্বে ছিল, তা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রভাব বিস্তার করেছিল। ঢাকা লিটফেস্টের প্যানেলের অপব্যবহার, সঠিক নির্বাচন ছাড়া পেন বাংলাদেশ দখল ও স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের সহায়তায় মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তার তেমন কিছু কাজের উদাহরণ।’
তিনি আরও বলেন, জেমকন গ্রুপের সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার আমি নিজে। আমার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মামলা এবং আইনি হয়রানির ঘটনাও ঘটানো হয়। জেমকন গ্রুপের স্থানীয় ঋণের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। একইসঙ্গে এই গ্রুপের সংবাদপত্রের সাবেক কর্মীদের বকেয়া পরিশোধ না করার ঘটনাটিও আলোচিত হয়। আমাকে ও আমার পরিবারকে মাফিয়া পদ্ধতিতে হুমকি দেওয়া হয়। যেখানে আমাদের পরিবারটির বিরুদ্ধে র্যাব ব্যবহার করে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
আহসান আকবার অভিযোগ করে বলেন, গ্রুপটি অর্থ পাচারে অভিযুক্ত, যার দায়ও তারা স্বীকার করেছে। বর্তমানে অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। দ্য ডেইলি স্টারের গত ১০ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটি অব লিবারাল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সাম্প্রতিক ছাত্র প্রতিবাদও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ছাত্ররা ফ্যাসিবাদী শাসনের সমর্থক জেমকন গ্রুপের দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরোধিতা করায় ‘জুলাই বিপ্লব’র ছাত্রদের সন্ত্রাসীর তকমা দেওয়া হয়। এই আন্দোলনে বর্তমানে পদ স্থগিত থাকা উপাচার্য ইমরান রহমানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়, যিনি বোর্ডকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছেন। আমরা প্রতিটি ঘটনায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার প্রমুখ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত