আ.লীগ দেশের ১৮ কোটি মানুষকে ভাড়াটিয়া মনে করত: ডা. শফিকুর রহমান

| আপডেট :  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭  | প্রকাশিত :  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, খুনের রাজত্ব কায়েম করতে আওয়ামী লীগ সরকার ’৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে লিজ নিয়েছিল। তারা বলত, এ দেশ তাদের সম্পত্তি, তারা বাড়ির মালিক, বাকি আমরা ১৮ কোটি সবাই ভাড়াটিয়া। এমনকি ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা নিজদলের নেতাকমীদেরও ভয় দেখাত। আওয়ামী লীগের বড় নেতারা বলতেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এক দিনে ৫ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করে ফেলবে। 

রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ফরিদপুর জেলা জামায়াত ইসলামীর আয়োজনে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আমিরে জামায়াত বলেন, আওয়ামী লীগ গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা শুধু আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেনি। তারা বিএনপির নেতাকর্মী, হেফাজত নেতাকর্মী, আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে ও গুম করেছে। এমনকি দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকেও তারা খুন করেছে। তারা মানুষের জীবন নিয়ে উপহাস করেছে।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার হিংস্র তাণ্ডবের কাছে বাংলাদেশ সেদিন পথ হারিয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৯ জন মানুষকে সেদিন লগি-বৈঠা দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। লাশের ওপর দাঁড়িয়ে সেদিন বিকৃত নিত্য করা হয়েছিল। সেদিন মানবতার বুক ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর মানুষের হাতে এ দেশ আবার তুলে দেওয়া হয়েছে। যাদের কারণে দেশ ফিরে পেয়েছি, আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা সেই ছাত্র-জনতার জন্য। আমরা তাদের স্যালুট জানাই।

বক্তব্যের শুরুতেই আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ গণঅভ্যুত্থানে সব নিহত শহীদদের স্মরণ করে ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আজ বক্তব্য দিতে পারবো, এটা কখনো ভাবিনি। আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন তাই এখানে এসেছি। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ ও সহকারী জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্যার বাড়ি ছিল এখানে। ফরিদপুরের মাটি রক্তে রঞ্জিত। শহীদের রক্ত এই মাটিতে মোছা যাবে না। তাদের অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে বিচারিক আদালতে খুন করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন করেছি, কখনো এককভাবে আবার কখনো যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি টেনেছে আমাদের সন্তানরা।

এ সময় তিনি পিলখানার বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, যারা এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড করেছে, তাদের জনসমক্ষে এনে ফাসির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজি আর হবে না, দখলদারি হবে না; মানুষের ওপর মানুষের কোনো জুলুম বরদাশত করা হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা যে বৈষম্যহীন সমাজ করতে চায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তেমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে প্রস্তুত। এই সমাজ বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামের আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ও ফরিদপুর অঞ্চলের পরিচালক এ এইচ এম হামিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল সহকারী পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, মো. মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য শামসুল ইসলাম আল বরাটি, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব প্রমুখ।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন মাদারীপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মো. মোখলেচুর রহমান, গোপালগঞ্জের আমির মাওলানা মো. রেজাউল করীম, শরীয়তপুর জেলা আমির মাওলানা আব্দুর রব হাসেমী, রাজবাড়ী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, ফরিদপুর জেলা জামায়াতের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মো. আবু হারিচ মোল্যা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম আবুল বাশার, ফরিদপুর সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. জসিম উদ্দীন, নগরকান্দা উপজেলা আমির মাওলানা মো. ছোহরাব হোসেন, বোয়ালমারী উপজেলা আমির মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম, ফরিদপুর পৌরসভার আমির এহসানুল মাহবুব রুবেল, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল হামিদ ও পৌর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. জিহাদুল সালাম রুত্ন প্রমুখ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত