‘সংস্কার টেকসই করতে সমঝোতা পরিষদ গঠন জরুরি’
সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য সমঝোতা পরিষদ গঠনের প্রয়োজনীয়তা হাজির করল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই ৩৬ ফোরাম- অপরাজেয় বাংলার উদ্যোগে ‘সমঝোতা ব্যতীত সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি?’ শীর্ষক সমঝোতা সংলাপ আয়োজনে এ জরুরত হাজির করা হয়।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম এর সভাপতিত্বে ও অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়ার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এনডিমের মহাসচিব মোহাম্মদ মমিনুল আমিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। এবং জুলাই ৩৬ ফোরাম- অপরাজেয় বাংলার আহ্বায়ক এম এ এন শাহীন।
‘টেকসই সংস্কারের একমাত্র পথ : রাজনৈতিক সমঝোতা’ এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন। প্রবন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের অপেক্ষায় না থেকে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত হয়ে সমঝোতা পরিষদ গঠন করে সংবিধান সংস্কারের ব্যাপ্তি এবং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা এবং প্ররোচনার মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। রাজনৈতিক সমঝোতার এ প্রক্রিয়াকে সহজ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐক্য কমিশনকে সেক্রেটারিয়েট হিসেবে কাজ করার কথাও বলা হয় মূল প্রবন্ধে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে নিষ্ক্রিয় থাকার উপায় নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব উপস্থিত হয়েছে। সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। সে প্রয়োজনীয় আলাপ আজকে আমরা শুরু করলাম। ক্রমাগত নানা অংশীদের মাঝে ও দেশব্যাপী সমঝোতার আলাপ তুলে ধরে সংবিধান সংস্কারের টেকসই ও বাস্তবমুখী পথ নির্ধারণ করতে পারব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, রাজনৈতিক মহলে সংস্কার নিয়ে ঐক্য বেশ অনেক দিনের। সব দলকে যুক্ত করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমঝোতা পরিষদ তৈরির প্রস্তাবে বিএনপির নৈতিক সম্মতি রয়েছে। কিন্তু সংস্কার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতেই।
বিএনপির ৩১ দফার ভিত্তিতে সমঝোতার কোর্স অব অ্যাকশন নিয়ে এর পরের ধাপে আলাপ আনতে হবে বলেও জানান তিনি।
সাইফুল হক বলেন, এ সময়ের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখা অপরিহার্য। কিন্তু নতুন একটা সংকট হচ্ছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে সর্বদলীয় সমর্থন ছিল সেটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাজের সব অংশকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যের রাস্তায় হেঁটে সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐক্য নিয়ে আসতে হবে।
মুজিবর রহমান মঞ্জু বলেন, যেখানে বড় দলের ক্ষেত্রেই সংস্কার সম্ভব হয়ে ওঠে না সেখানে রাষ্ট্রের সংস্কার একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। ক্ষমতাকে শক্তির জায়গা থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে। সমঝোতায় আসতে ছোট বড় সব শক্তির ক্ষমতার ভারসাম্য আলোচনার প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে।
আবুল হাসান রুবেল বলেন, জাতির জীবনে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বার বার আসে না। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সেজন্যে বড় দলগুলোকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং জাতীয় ঐক্যের দিকে নিয়ে গিয়ে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সৃষ্টি করতে হবে।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া নয়। দু’টা চ্যালেঞ্জ। কি কি সংস্কার এবং কি উপায়ে বাস্তবায়ন দুই কক্ষেই রাজনৈতিক দল সর্বস্ব করে রাখা হয়েছে। সামনের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষকে কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা যাবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
সাকিব আনোয়ার তার বক্তব্যে বলেন, এসময় যখন অনৈক্যের হাওয়া চারদিকে তখন রাজনৈতিক শক্তির সমঝোতায় আসা ছাড়া দেশকে মুক্ত করার কোনো উপায় থাকবে না। কমিশনের সুপারিশে অনেক ভালো দিক থাকলেও অনৈক্য সৃষ্টি করতে পারে সেসব প্রস্তাবও সে সুপারিশে চলে এসেছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে অনৈক্যের বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা সংলাপের আয়োজন করা।
এম এ এন শাহীন বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ গত সরকারের সময় ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এখন রাজনৈতিক শক্তিদের সে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার সংকল্প করতে হবে।
এছাড়াও এনডিম এর মহাসচিব মোহাম্মদ মমিনুল আমিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব ড. আবু ইউসুফ সেলিম বক্তব্য রাখেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত