দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত খাপড়াভাঙ্গা নদী

| আপডেট :  ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৩  | প্রকাশিত :  ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৩

পটুয়াখালীর মহিপুরে খাপড়াভাঙ্গা নদী অবৈধ দখল ও দূষণের শিকার হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একসময় এই নদী মৎস্যজীবীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন প্লাস্টিক-পলিথিন ও নানা ধরনের বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয়দের অবহেলার কারণে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে।

মহিপুর ও আলীপুর মৎস্যবন্দরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা খাপড়াভাঙ্গা নদী বরাবরই জেলেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুর্যোগকালীন সময়ে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার এখানে আশ্রয় নেয়। তবে বর্তমানে পলিথিন-প্লাস্টিকের স্তূপ ও অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে নদীর বিশাল অংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নদীর দুই তীরে ছেঁড়া জাল, পচা মাছ ও দোকানপাটের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, আন্ধারমানিক নদীর প্রবেশমুখে পলি জমে বড় চর সৃষ্টি হওয়ায় খাপড়াভাঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ কমে গেছে। জোয়ার-ভাটার সময় স্বাভাবিক নৌচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে মাছ ধরার ট্রলারগুলো প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সমস্যায় পড়ছে।

পানি দূষণের পাশাপাশি দখলের শিকারও হয়েছে খাপড়াভাঙ্গা নদী। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী নদীর দুই পাড়ে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে নদীকে সংকুচিত করেছে। এতে করে জলজ প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে এবং জেলেদের চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

জেলে মো. সোহেল বলেন, একটা সময় নদীর প্রশস্ততা ছিল। অনায়াসে ২টা বড় মাছের ট্রলার আমরা ক্রস করতে পারতাম। এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। 

পরিবেশবাদী সংগঠন রিও’র চেয়ারম্যান মো. সাইদূর রহমান বলেন, প্রত্যেকের সচেতন হওয়া দরকার। এভাবে এই  নদীটি ভরাট হয়ে গেলে এখান থেকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা জেলেরা ঝড় জলোচ্ছ্বাসে নিরাপদে আশ্রয় নিত, সেটা থেকে বঞ্চিত হবে। 

এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, জেলেদের পোতাশ্রয় এ নদীটির গুরুত্ব অনেক বেশি। একেতো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তার ওপরে দখল-দূষণ চলছে সমানে। এটি উদ্বেগজনক বিষয়। প্রথমেই নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দখল-দূষণ বন্ধ করা প্রয়োজন। নইলে জেলেসহ মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের পেশায় সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য দ্রুত প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নিয়ে নদীটি রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সব ব্যবসায়ীদের দূষণ বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দখল-দূষণের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাপড়াভাঙ্গা নদীকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই দখল ও দূষণরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। অন্যথায়, গুরুত্বপূর্ণ এই নদী দ্রুতই বিলীন হয়ে যাবে, যা পুরো অঞ্চলের মৎস্য খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত