নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার বিবৃতি
নারী সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী ও নৈতিকতা-বিচ্যুত সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা।
রোববার (২০ এপ্রিল) রাতে এক বিবৃতি দেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার কেন্দ্রীয় সভানেত্রী মুনজিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস আকারে সেটি শেয়ার করা হয়।
তার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট যে প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা জমা দেওয়া হয়েছে, তা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত হানে। এটি নারী উন্নয়নের নামে একটি মতাদর্শিক ও পশ্চিম-অনুকরণভিত্তিক আগ্রাসন ছাড়া কিছুই নয়।
কমিশনের সুপারিশসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে যেগুলো জনমনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, তা হলো :
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী-পুরুষকে সমান সম্পত্তি প্রদানের প্রস্তাব (পৃষ্ঠা ২৫)। যা ইসলামী শরিয়াহ ও সংবিধানে সংরক্ষিত ধর্মীয় স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন (পৃষ্ঠা ৯)। এটি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পারিবারিক স্বাধীনতা ও ধর্মচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং এক ধরণের আইনগত ধর্মত্যাগ চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বিবাহ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় জাতিসংঘ প্রণীত CEDAW বাস্তবায়নের প্রস্তাব (পৃষ্ঠা ৯)। যা মূলত ইসলামি বিধানকে অগ্রাহ্য করে পশ্চিমা নারীবাদী নীতি চাপিয়ে দেওয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্র।
নারী-পুরুষের সম্পর্ককে ‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব’ হিসেবে তুলে ধরা (পৃষ্ঠা ৯)। এটি বাঙালি সমাজে প্রচলিত পারস্পরিক সহমর্মিতা, মমতা ও সহযোগিতার সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয়ার মত বিপজ্জনক চিন্তা।
পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে যৌনকর্মীদের ‘শ্রমজীবী’ হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদানের সুপারিশ। এটি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের একটি ভয়ংকর ব্যবস্থা। ইসলাম ও সুস্থ সমাজব্যবস্থা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে মানে না; বরং তা নির্মূল করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ ও অবস্থান :
ইসলামী ছাত্রী সংস্থার বিবৃতি অনুসারে এই কমিশনের সদস্যরা একটি বিশেষ মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা দেশের ধর্মপ্রাণ নারীদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেন না। এই কমিশন কোনোভাবেই বাংলাদেশের নারীদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি নয়।
এই প্রতিবেদন গবেষণাধর্মী নয়, একপেশে মতাদর্শিক বক্তব্য। তাতে সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়নি। তথ্যবিহীন এই নীতিমালা আসলে একটি মতাদর্শিক প্রোপাগান্ডা মাত্র।
নারী উন্নয়নের নামে ধর্মীয় বিধানকে বাতিল করার যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে তা কেবল ইসলাম নয়, সকল ধর্মের প্রতি অবমাননার শামিল এবং দেশে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।
বিবৃতিতে সংগঠনটি কিছু দাবি তুলে ধরে। তা হলো-
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে অবজ্ঞা করে গঠিত বর্তমান কমিশন বাতিল করে, ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাসী প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
পতিতাবৃত্তি নির্মূলের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট নারীদের মানবিক ও হালাল উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ধর্মীয় বিধানসমূহকে সংবিধানের আলোকে রক্ষা করে নারী উন্নয়নের একটি ভারসাম্যমূলক ও সমাজবান্ধব রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই দেশ ইসলামপ্রিয় মানুষের দেশ। ধর্মহীন মতবাদ এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে নারী উন্নয়নের নামে যদি ইসলামবিরোধী ও সমাজবিধ্বংসী কোনো ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে দেশের লাখো-কোটি মুসলমান এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে।
বিবৃতিতে মুনজিয়া বলেন, ‘আমরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, যদি এই প্রতিবেদন প্রত্যাহার ও কমিশন বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয়, তবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি গণবিরোধী অবস্থানের দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত