গাজা যুদ্ধ নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি মার্কিন দূতের

| আপডেট :  ১২ মে ২০২৫, ০৫:১৬  | প্রকাশিত :  ১২ মে ২০২৫, ০৫:১৬

গাজা যুদ্ধ ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়িত করছে ইসরায়েল- এমন চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। 

তিনি বলেছেন, ইসরায়েল জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায়ও বাধা দিচ্ছে। উইটকফের মতে, এখন যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির চুক্তিই সবচেয়ে যৌক্তিক ও মানবিক পদক্ষেপ। সোমবার (১২ মে) তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন উইটকফ। ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, রোববার (১১ মে) ওই বৈঠকে তিনি ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। তবে বৈঠকটি কবে ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি চ্যানেলটি।

বৈঠকে উইটকফ বলেন, আমরা চাই বন্দিরা ফিরে আসুক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইসরায়েল এখনো যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত নয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র তার এমন মন্তব্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ পরিচালনা কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে উইটকফ বলেন, ইসরায়েল সরকার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে, অথচ বাস্তবতা হলো- এই যুদ্ধ থেকে আর কোনো কার্যকর অগ্রগতি আসছে না।

তিনি আরও বলেন, এখনো একটি সুযোগ রয়েছে, যা আমরা আশা করি ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারীরা কাজে লাগাবে। আমরা বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং এ লক্ষ্যে সব পক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছি।

স্টিভ উইটকফের এমন মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, তারা মার্কিন-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক সৈনিক আলেকজান্ডার ইদানকে মুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই আলোচনা যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূতের এমন বক্তব্য সামনে এলো তার আসন্ন সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের প্রাক্কালে। এই সফর চলবে মঙ্গলবার (১৩ মে) থেকে শুক্রবার (১৬ মে) পর্যন্ত। সফরে ট্রাম্পের ইসরায়েল যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি মার্কিন ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে টানাপোড়েন বেড়েছে। ট্রাম্প তার নিজস্ব মধ্যপ্রাচ্যনীতি বাস্তবায়নে দলীয়ভাবে এগোচ্ছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, এখনো গাজায় ৫৯ ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২১ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে ইসরায়েলের কারাগারে প্রায় ৯ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন বলছে, এসব বন্দির অনেকেই নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে স্টিভ উইটকফের মন্তব্য শুধু গাজা যুদ্ধ নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া নিয়েই নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত