৩২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, বাবা-ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহবুবুর রহমান খান ও ছেলে যুবলীগ নেতা কে এম মাহমুদ হাসানের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আলাদালত। ব্যবসার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ আদেশ দেন।
রোববার (২৯ জুন) ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেন ঢাকা জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতের যুগ্ম জেলা জজ রুবায়েত ফেরদৌস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে তারাবোর সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলেকে এম মাহমুদ হাসান রুপালি ব্যাংক থেকে ১৬৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা বর্তমানে ২০৯ কোটি টাকা হয়। এ ছাড়া ২০১১ সালে সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে তিন ধাপে ঋণ নেন এ পরিবার।
সাউথইস্ট ব্যাংকের মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২১০১/২০১১ এ ৭৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ২১০২/২০১১ এ ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ২১০৩/২০১১ এ ২৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এ ছাড়াও কাগজ ব্যবসায়ী মো. ইসহাক দুলালের কাছ থেকে দুবারে ১১ কোটি ৩ হাজার টাকা লোন নেন৷ পরে টাকা ফেরত না দেওয়া ইসহাক দুলাল দুটি মামলাও করেন ৷
জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যক্তি এবং ব্যাংকের কাছে থেকে ব্যবসার কথা বলে চুক্তি করে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে মাহবুবুর রহমান খান। সাবেক মন্ত্রীর কাছে লোক হওয়ায় তাদের কেউ কিছু বলেতে সাহস পেত না। এমনকি ব্যাংকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেও টাকা আদায় ব্যর্থ হয়। পরিবর্তিত অবস্থায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান টাকা আদায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ পরিবারে বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নানা মামলাসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। বর্তমানে বাবা-ছেলে এ লোনের টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে বিদেশে পলায়নের পাঁয়তারা করছে।
পরে ভুক্তভোগী ইসহাক দুলাল একটি মামলা করেন এবং আদালতে আবেদন করলে আদালত বিষয়টি নজরে নিয়ে পরে মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে কে এম মাহমুদ হাসানকে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ দেন। কিন্তু বারবার সুযোগ প্রদানের পরও আদালতে সশরীরে হাজির না হওয়ার গত ২২ জুন তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইসহাক দুলাল কালবেলাকে বলেন, মাহবুব ও ছেলে সিয়াম ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে ব্যবসার কথা বলে ধাপে ১১ কোটি টাকা নেয়। ব্যবসার নামে টাকা নিয়ে আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে মামলা করলেও তারা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তিনি আরও বলে, স্থানীয় সাবেক মন্ত্রী ও তার ছেলের সব অবৈধ কার্যকলাপের সুবিধাভোগী এ বাবা-ছেলে। জুলাই আন্দোলনে শত শত কোমলমতি ছাত্রের ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশদাতা ছিলেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ একাধিক থানায় মামলাও রয়েছে।
ইসহাক বলেন, ‘সরকার পতনের পর বাবা-ছেলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো আশ্রয় না পেয়ে দেশত্যাগ করার চেষ্টা করেন। দেশের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন৷ তাই দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত