ফিট অ্যান্ড ফাইন

| আপডেট :  ০৪ ডিসেম্বর ০০০১, ১২:০০  | প্রকাশিত :  ০৪ ডিসেম্বর ০০০১, ১২:০০

সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়ম মেনে জীবনযাপনের বিকল্প আর কিছু নেই। যদি নিয়মমাফিক জীবনযাপন করেন, তাহলেই সুস্থ-সবল থাকবেন। কোন কোন নিয়ম মেনে চললে থাকা যাবে সুস্থ তাই নিয়ে লিখেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট নিজের জন্য ব্যয় করুন। জিমে যান, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন, যোগাসন অভ্যাস করুন, হাঁটাচলা, দৌড়ানো, জগিং—যেভাবেই হোক শরীরকে নড়াচড়ার মধ্যে রাখা জরুরি।

ব্যায়াম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিষণ্নতাসহ বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এ ছাড়া ব্যায়াম শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, হাড় ও পেশি শক্তিশালী করতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সহায়ক।

ব্যায়ামের উপকারিতা

শারীরিক সুস্থতা: নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এটি হাড় ও পেশি মজবুত করে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

মানসিক সুস্থতা: ব্যায়াম স্ট্রেস, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সহায়ক। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ: নিয়মিত ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত ব্যায়ামের জন্য কিছু পরামর্শ

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন। যেমন—দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা।

সপ্তাহে অন্তত দুদিন পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করুন। যেমন—ওজন তোলা বা শরীরের ওজন ব্যবহার করে ব্যায়াম করা।

ব্যায়াম করার সময় আরামদায়ক পোশাক ও জুতা পরুন। ব্যায়াম করার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করুন, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।

কিছু সাধারণ ব্যায়ামের উদাহরণ

হাঁটা: দ্রুত হাঁটা একটি চমৎকার মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম।

সাঁতার: সাঁতার একটি সম্পূর্ণ ব্যায়াম, যা শরীরের প্রায় সব অঙ্গের জন্য উপকারী।

সাইকেল চালানো: এটি একটি মজার এবং কার্যকরী ব্যায়াম, যা হৃদরোগের জন্য ভালো।

যোগব্যায়াম: যোগব্যায়াম শরীরের নমনীয়তা, ভারসাম্য ও মানসিক শান্তি বাড়ায়।

নৃত্য: এটি একটি মজাদার ব্যায়াম, যা হৃদরোগের জন্য ভালো এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সক্রিয় রাখে।

সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়ামের পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন থাকাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পানি খাওয়া জরুরি। তাই বলে অতিরিক্ত পানি খেতে যাবেন না। তাহলে আবার কিডনি বিকল হতে পারে। আসলে কোনো কিছুই অতিরিক্ত করা ভালো নয়। সুস্থ থাকতে চাইলে ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়া যাবে না। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্রেকফাস্ট করা জরুরি। সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত ব্রেকফাস্টে।

খুব পেটভরে খাবার খাওয়া কখনোই ভালো নয়। কিন্তু ব্রেকফাস্টে এমন খাবার খান, যা সহজে হজম হবে এবং অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখবে।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি। তেল-মসলা, ভাজাভুজি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। জীবন থেকে চিনি ও কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারলেই মঙ্গল। ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকলে, স্বাস্থ্যের পক্ষে সেটাই শ্রেয় হবে। বারবার অল্প করে খান। একসঙ্গে অনেকটা খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ঠিক নয়। দীর্ঘক্ষণ খাবার না খেলে, খালি পেটে থাকলে দ্রুত অসুস্থ হবেন।

ওজন কমাতে গিয়ে না খেয়ে থাকবেন না। এর জেরে হিতে বিপরীত হবে। বাইরের খাবার যতটা সম্ভব কম খেলেই ভালো। কৌটা কিংবা টিনজাত এবং প্রসেসড খাবার একেবারেই না খেতে পারলে সুস্থ থাকবেন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কিছু মূল উপাদান

ফল ও সবজি: ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের চমৎকার উৎস। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।

শস্য ও শস্যজাতীয় খাবার: লাল আটা, লাল চাল, ভুট্টা ইত্যাদি। এগুলোতে ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বেশি থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

প্রোটিন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন শরীরের পেশি গঠন ও মেরামতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, বীজ, জলপাই তেল ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে।

কিছু টিপস

নিয়মিত এবং সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করুন।

খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খান। অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

পরিমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন, অতিরিক্ত খাবেন না। খাবার প্রস্তুত করার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিন।

বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। পর্যাপ্ত এবং ভালোমানের ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ভালো ঘুমের জন্য যা করতে পারেন

নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।

বিছানায় যাওয়ার আগে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন: ঘর অন্ধকার করুন, শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন এবং আরামদায়ক পোশাক পরুন।

ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম কমানো: ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।

শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়।

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার করা: ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যদি ঘুমের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

স্বাস্থ্যকর রুটিন মেনে চললে যে কোনো অভ্যাসেরই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এতে আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ে, শরীর ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে থাকে। সুস্থ থাকতে হলে শরীরের নিয়মিত যত্ন নেওয়া জরুরি। প্রতিদিন একই সময়ে এবং একই পরিমাণে ঘুমানো, একই সময়ে ব্যায়াম করা, সুষম খাবার খাওয়া—এসব অভ্যাস শরীরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এতে হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকে।

মানসিক স্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, ছকে বাঁধা জীবন চাপ কমায়, মনোযোগ বাড়ায়। সবশেষে এটাই বলা যায়, নিয়ম মেনে চলা কঠিন হলেও এতে যে আপনি দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক ফল পাবেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত