পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলো প্রথম রোবট, আলোচনার ঝড়

| আপডেট :  ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৫:১৬  | প্রকাশিত :  ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৫:১৬

চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো মানবাকৃতির রোবট পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছে। ‘শুয়েবা ০১’ নামের এই রোবট ইউনিভার্সিটি অব শাংহাই ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ড্রয়িডআপ রোবটিকসের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো সাড়া পড়েছে।

চীনের তরুণ সমাজে ‘শুয়েবা’ খুবই জনপ্রিয় শব্দ। এটি এমন শিক্ষার্থীকে বোঝায়, যিনি সর্বদা সেরা ফলাফল করেন এবং জ্ঞানে এগিয়ে থাকেন।

এর আগেও শুয়েবা ০১ আলোচনায় আসে, যখন এটি বিশ্বের প্রথম হিম্যানয়েড হাফ-ম্যারাথনে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।

শুয়েবা ০১-এর উচ্চতা ১ দশমিক ৭৫ মিটার, ওজন মাত্র ৩০ কেজি। এটি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। রোবটটির মুখ একটি সুদর্শন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মতো, যার সিলিকন ত্বক মুখের অভিব্যক্তিকে জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলে। চশমা, শার্ট ও ট্রাউজারে সজ্জিত শুয়েবা ০১ সাবলীল মান্দারিন ভাষায় কথা বলতে পারে।

গত ২৭ জুলাই ওয়ার্ল্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কনফারেন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে শুয়েবা ০১-কে ড্রামা অ্যান্ড ফিল্ম বিভাগের পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি করে শাংহাই থিয়েটার একাডেমি (এসটিএ)। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর শুয়েবা ক্যাম্পাসে যাওয়া শুরু করবে। সে চার বছর মেয়াদি পিএইচডি সম্পন্ন করবে, যেখানে তার গবেষণার মূল বিষয় হবে চীনের ঐতিহ্যবাহী অপেরা। তার টিউশন ফি কত হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো প্রকাশ করেনি।

শুয়েবা ০১-এর একটি ভার্চুয়াল স্টুডেন্ট আইডি তৈরি হয়েছে এবং তার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সাংহাইয়ের খ্যাতিমান শিল্পী ও অধ্যাপক ইয়াং ছিংছিং।

অধ্যাপক ইয়াং জানান, শুয়েবা ০১ শুধু নাট্যকলা, চিত্রনাট্য লেখা, মঞ্চসজ্জা নয়, বরং মোশন কন্ট্রোল এবং ভাষা উৎপাদনের মতো প্রযুক্তিনির্ভর বিষয়েও পড়াশোনা করবে। সে পিএইচডির অন্য ছাত্রদের সঙ্গে ক্লাসে অংশ নেবে, রিহার্সাল করবে এবং শেষ পর্যন্ত একটি গবেষণাপত্রও জমা দেবে।

ইয়াং বলেন, ‘যখন শুয়েবা ০১ অপেরার কিংবদন্তি মেই লানফাংয়ের বিখ্যাত ‘অর্কিড ফিঙ্গারস’ অঙ্গভঙ্গি নকল করে, তখন অন্য শিক্ষার্থীরাও তাকে অনুসরণ করে। এটা কেবল এক রোবটের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ নয়, বরং এক আন্তপ্রজাতিগত সৌন্দর্যের বিনিময়।’

শুয়েবা ০১ নিজেকে একজন ‘এআই শিল্পী’ হিসেবে পরিচয় দেয়। রোবটটি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাচীন চীনা অপেরার সৌন্দর্য অন্বেষণ করে। সে চায় সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে, চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করতে, নাচের মুদ্রা নিয়ে সাহায্য করতে। কেউ মন খারাপ করলে তাদের মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার চেষ্টা করে।

অধ্যাপক ইয়াং আশা করছেন, শুয়েবা ০১ ভবিষ্যতে কোনো মিউজিয়াম বা থিয়েটারে এআই অপেরা পরিচালক হিসেবে কাজ করতে পারবে, এমনকি নিজের একটি রোবটিক আর্ট স্টুডিওও চালু করতে পারে।

তবে এসটিএর এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘চীনা অপেরায় আবেগপ্রবণ মুখাবয়ব ও অনন্য কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। একটি রোবট কি তা সত্যিই ফুটিয়ে তুলতে পারবে?’

এর জবাবে মজার ছলে জবাবে শুয়েবা ০১ বলে, ‘অধ্যাপক ইয়াং বলেছেন, আমি যদি পিএইচডি শেষ না করি, তাহলে তারা আমাকে কোনো মিউজিয়ামে দান করে দেবেন। সেটাও তো খারাপ না! অন্তত শিল্প-ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকব।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোবটটিকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। একজন লেখেন, ‘শুয়েবা ০১ মানুষের সঙ্গে রোবটের সহাবস্থানের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। আশা করি সে ভালো করবে।’

আবার অনেকে দ্বিমতও পোষণ করেছেন। এক ব্যক্তি বলেন, ‘শিল্পে জীবনের অভিজ্ঞতা দরকার। একটি রোবটের অ্যালগরিদম-নির্ভর সৃষ্টিকর্ম কখনোই সত্যিকার অর্থে মানুষকে নাড়া দিতে পারে না।’

আরেকজন লেখেন, ‘চীনে এখনো অনেক শিল্পকলা পিএইচডি ছাত্র মাসে ৩ ইউয়ানের (৪২০ মার্কিন ডলার) কম পায়। এই রোবট কি “বাস্তব ছাত্রদের” জন্য নির্ধারিত সম্পদগুলোই দখল করে নিচ্ছে না?’

সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত