চীনের দিকে ঝুঁকছে আফ্রিকার দেশগুলো, কী করবে যুক্তরাষ্ট্র

| আপডেট :  ০২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫১  | প্রকাশিত :  ০২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫১

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত নতুন আমদানি শুল্ক আফ্রিকার বহু দেশের ওপর তীব্র প্রভাব ফেলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে বিকল্প বাণিজ্য অংশীদার খুঁজছে এ মহাদেশের দেশগুলো। আর ঠিক সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন।

নাইজেরিয়ার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বিসমার্ক রেওয়ানে সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা (আফ্রিকা) সরাসরি চীনের হাতে চলে যাচ্ছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক পরিণতি।’ তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে চীন।

চরম শুল্কের মুখে আফ্রিকার প্রধান দেশগুলো

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাণিজ্য নীতিতে আফ্রিকার ৪টি দেশ—লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার রপ্তানির ওপর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আরও ১৮টি আফ্রিকান দেশকে ১৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই শুল্ক আরোপ ‘পারস্পরিকতা ভিত্তিক’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে, অন্য দেশের ধার্য করা শুল্ক নয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০ শতাংশ শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ‘উপলব্ধ বাণিজ্য উপাত্তের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নয়।’ 

চীনের সুযোগ ও আফ্রিকার ঝুঁকি

চীন ইতোমধ্যেই আফ্রিকার সঙ্গে প্রায় সব রপ্তানিপণ্যে নিজ দেশের পক্ষ থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষক নিও লেটসওয়ালো বলেন, ‘এখনই সময় দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য জোরদার করার, এবং আফ্রিকাকে এখন চীনমুখী হওয়া উচিত।’

তবে তিনি সতর্ক করেন, ‘চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে নবীন শিল্পখাতগুলোর জন্য। যদি সুরক্ষা না দেওয়া হয়, তাহলে সস্তা চীনা পণ্যে সেগুলো টিকে থাকতে পারবে না।’

চীন-গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের মতে, চীনও কিছু বাণিজ্য চুক্তিতে আফ্রিকার সঙ্গে ভারসাম্যহীন আচরণ করেছে। আফ্রিকা থেকে চীনে প্রধানত কাঁচামাল রপ্তানি হয়, অন্যদিকে চীন থেকে আসে শিল্পজাত পণ্য।

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো

আফ্রিকার দরিদ্র দেশ লেসোথো ১৫% শুল্কে পড়েছে, যদিও শুরুতে তাদের জন্য শুল্ক ছিল ৫০%। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্যামুয়েল মাতেকানে জানান, এই বিশাল শুল্ক এবং মার্কিন সহায়তা বন্ধ হওয়ার ফলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হারিয়েছে।

লেসোথো ইতোমধ্যেই দুই বছরের ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল শিল্প ধ্বংসপ্রায়।

দক্ষিণ আফ্রিকার সংকট

দক্ষিণ আফ্রিকায় সাইট্রাস খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে হাজার হাজার টন কমলা, লেবু রপ্তানির জন্য প্রস্তুত। তবে শুল্ক আরোপে মার্কিন বাজারে রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে সেই ফল বিক্রি করা যাবে না, জানিয়েছে দেশটির সাইট্রাস গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।

অটোমোবাইল খাতও হুমকির মুখে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এতে দক্ষিণ আফ্রিকার উচ্চ বেকারত্ব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার খনিজ ও জ্বালানিমন্ত্রী গুয়েদে মানতাশে বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন। কাজেই বিকল্প বাজার খুঁজে বের করতে হবে।’

আফ্রিকার করণীয়

সতর্কবার্তা দিলেও গবেষক লেটসওয়ালো বলছেন, একদিকে চীনের দিকে ঝুঁকতে হবে, অন্যদিকে আফ্রিকাকে নিজস্ব বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আফ্রিকান কনটিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এএফসিএফটিএ)-র দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এই বাণিজ্য চুক্তি চালু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২০টির মতো দেশ কার্যকরভাবে এতে বাণিজ্য করছে।

অর্থনীতিবিদ রেওয়ানে বলেন, ‘এই শুল্ক আমাদের শিখিয়েছে—আফ্রিকাকে বৈদেশিক নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি ভ্যন্তরীণ দিকে মনোযোগী হতে হবে, বাইরের ওপর নির্ভরশীলতা নয়।’ 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত