শিক্ষা প্রকৌশলে আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীদের বেপরোয়া দাপট

| আপডেট :  ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২১  | প্রকাশিত :  ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২১

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) এখনো আওয়ামীপন্থি প্রকৌশলীদের দাপট দেখা যাচ্ছে। তারা একজোট হয়ে প্রধান প্রকৌশলীকে তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করতে বাধ্য করে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ইডিতে অন্য চিন্তার বা সাধারণ প্রকৌশলীরা আওয়ামীপন্থীদের কাছে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। 

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য ইইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল করিমকে গত বছর ৫ আগস্টের পর শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি পুনরায় নরসিংদী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়েছেন। ইডিতে ফ্যাসিস্টটের দোসর খ্যাত খন্দকার নাজমুল হাসান, গোলাম মুত্তাকিন, ইসতিয়াক ইকবাল হিমেল, শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য। জুলাই আন্দোলন রুখে দিতে তারা সক্রিয় ছিলেন। অথচ এরা সবাই এখনো শিক্ষা প্রকৌশলের গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় পদগুলোতে বসে রাজত্ব করছেন। 

ইইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, শাহ নঈমুল কাদের, চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার সরকারি চাকরির বিধি বিধানকে পাশ কাটিয়ে সারাদিন অনলাইনে আওয়ামী বন্দনা, শেখ হাসিনা বন্দনা প্রচার করতেন। বর্তমানে তারা আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে ইইডির সর্বত্র ফ্যাসিবাদদের দোসরদের প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ইইডির প্রকৌশলী ইমরান হোসেন খাঁন ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্য। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি গণহত্যার সাফাই গেয়েছেন। মাঠে নেমে ছাত্র-জনতাকে মোকাবিলা করেছেন। সে ব্যক্তি এখনও প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার পদে বসে দাপটের সঙ্গে সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। একজন প্রধান প্রকৌশলী তার স্টাফ অফিসারসহ অন্য আওয়ামী দোসরদের নিয়ে কীভাবে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে গোপনে সভাও করেছেন। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নজরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ওই প্রকৌশলীকে ওএসডি করা হয়। এখন তিনি ওএসডি হলেও অধিদপ্তরে বসেই বিভিন্ন বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে তার আস্থাভাজন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের সেক্রেটারি হিসেবে ছিলেন জাফর আলী শিকদার। তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল সমিতি আরও যারা ছিলেন তারা সবাই এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। 

তথ্য অনুসন্ধ্যানে দেখা যাচ্ছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ইইডিতে রায়হান বাদশাহসহ তিনজন প্রধান প্রকৌশলী পরিবর্তন হলেও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেইন খানকে কেউ এই পদ থেকে সরাতে পারেনি। ইইডির নাজমুস সাকিব তারেক, মো. সরোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন কুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তারা এখনো ইইডির ঢাকা মেট্রোতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দাপট দেখাচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলে সবার মধ্যে চরম অস্বস্তি থাকলেও দোসরদের দাপটে কোনোভাবেই লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার ইমরান হোসেইন খান, অপর প্রকৌশলী নাজমুস সাকিব তারেক, মো. সরোয়ার হোসেন বিগত সরকারের আমলে ঢাকা মেট্রোতে গুরুত্বপূর্ণ পদায়নে থেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। 

এই আওয়ামী প্রকৌশলী পরিষদ গ্রুপ এখন পর্যন্ত তাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রধান প্রকৌশলীকে চাপ প্রয়োগসহ নানাভাবে বিড়ম্বনায় ফেলার জাল বিস্তার করে থাকে। শিক্ষা প্রকৌশলের অন্যতম দোসর হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের ভ্যানগার্ড শাহজাহান আলী। অজানা কারণে তার সাম্রাজ্য দিন দিন কেবল বড়ই হচ্ছে।  ইইডির সিনিয়র-জুনিয়র কাউকেই সে  তোয়াক্কা করেন না, অথচ ইইডি সবাই জানেন, এরা সবাই গত বছরের ৪ আগস্ট বৈঠক করে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর কাছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অস্ত্র চেয়েছিল। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলতাফ হোসেন খান বলেন, কে কোন দলের সাপোর্ট করল তার চাইতে বড় কথা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ঠিকভাবে অফিসের কাজ করছে কি না সেটা দেখা। কেউ নিজ দায়িত্ব বাদ দিয়ে রাজনীতির চর্চা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত