একদম সাধারণ যে ৩ অভ্যাসেই ক্ষতি হচ্ছে কিডনির, জানালেন চিকিৎসক

| আপডেট :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৯  | প্রকাশিত :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৯

আমাদের শরীরে কিছু অঙ্গ আছে যেগুলো ছাড়া বেঁচে থাকা একেবারেই অসম্ভব। তার মধ্যে কিডনি অন্যতম। দুই পাশে থাকা এই ছোট্ট অঙ্গ জলের মতো চুপচাপ থেকে প্রতিদিন শরীরের ভেতরে চালায় হাজারো কাজ। মূত্র তৈরি করা থেকে শুরু করে শরীরের ক্ষতিকর বর্জ্য বের করে দেওয়া, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এমনকি হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা— সবকিছুই নির্ভর করে কিডনির ওপর।

অথচ আমরা সচেতন না থেকেও প্রতিদিনের কিছু সাধারণ অভ্যাস দিয়ে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করি। যার ফলে ধীরে ধীরে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় কোনো উপসর্গ ধরা পড়ে না। ফলে যখন ধরা পড়ে, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তাই শুরু থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি।

ভারতের রুবি হল ক্লিনিকের ইউরোলজিস্ট ডা. ক্ষিতিজ রঘুবংশী জানিয়েছেন, আমাদের তিনটি প্রতিদিনকার অভ্যাস কিডনিকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চলুন, জেনে নিই সেই অভ্যাসগুলো —

১. কড়া পেইনকিলার মানেই কিডনির ক্ষতি

মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা কিংবা পিরিয়ডের যন্ত্রণা কমাতে আমরা প্রায়ই ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ওষুধ খাই। এগুলোকে বলে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs)। নিয়মিত বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ খাওয়া কিডনির জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর।

NSAIDs রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব ফেলে। এগুলো রক্তপ্রবাহ ব্লক করে দিলে কিডনিতে রক্ত কম পৌঁছায়, ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাদের আগে থেকেই কিডনি বা হৃদরোগ আছে, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কিডনিতে ইনফ্লেমেশন হতে পারে, যা শেষে স্থায়ী কিডনি বিকলের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একইসঙ্গে একাধিক পেইনকিলার খাওয়া বা মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এই ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দেয়।

২. অতিরিক্ত লবণ

অনেকে মনে করেন সাধারণ লবণের বদলে সি-সল্ট বা হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট ব্যবহার করলে ক্ষতির আশঙ্কা কমে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সব লবণই আসলে সোডিয়াম ক্লোরাইড— তাই ক্ষতিকর প্রভাবের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই।

আসল বিপদ লুকিয়ে আছে অতিরিক্ত সোডিয়াম খাওয়ায়। শরীরে অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়, যা কিডনি ক্ষতির বড় কারণ। লবণ বেশি খেলেই কিডনিকে বাড়তি কাজ করতে হয়। তাই তার ওপর চাপ পড়ে এবং ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।

ডা. রঘুবংশী বলেন, ‘এক লবণ থেকে অন্য লবণে ভরসা করলে সমস্যা মেটে না, আসল সমাধান হলো মোট সোডিয়াম ইনটেক কমানো।’

৩. অতিরিক্ত পানি খাওয়ার ক্ষতি

আমরা প্রায়ই শুনি বেশি পানি খাওয়ার উপকারিতা। কিন্তু সবসময় বেশি পানি মানেই ভালো নয়। অনেকেই ভুল করে মনে করেন, বেশি পানি মানেই কিডনি আরও সুরক্ষিত থাকবে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে ৬-৭ লিটার পানি খাওয়া একেবারেই প্রয়োজন নেই। বরং এতে হাইপোনাট্রিমিয়া নামের একটি সমস্যা হয়, যেখানে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এতে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ফুলে ওঠা, খিঁচুনি কিংবা মৃত্যুও হতে পারে।

তাই সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গড়ে ২-৩ লিটার পানি যথেষ্ট। তবে পানি খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে আবহাওয়া, কাজের ধরণ আর শরীরের চাহিদার ওপর। তাই জোর করে পানি খাওয়ার বদলে তেষ্টা পেলে পানি খাওয়াই সঠিক নিয়ম।

 

পেইনকিলার নেওয়ার আগে কী সতর্কতা নেবেন?

ডা. রঘুবংশীর পরামর্শ—

পেইনকিলার নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, সেটা আধুনিক কিংবা আয়ুর্বেদিক যাই হোক।

কিডনি বা লিভারের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ থাকলে আলাদা সতর্ক থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট মাত্রা মেনে চলুন, কখনোই ওষুধের সীমা ছাড়াবেন না।

হারবাল বা আয়ুর্বেদিক ওষুধও সবসময় নিরাপদ নয়। অনেক সময় এসব ওষুধে ভারী ধাতু থাকে, যা কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করতে পারে।

ওষুধের লেবেল ভালোভাবে পড়ুন। অনেক সময় একাধিক উপাদান মিশে থাকে, ভুল করে অতিরিক্ত প্যারাসিটামল বা NSAIDs খেলে ওভারডোজের ঝুঁকি তৈরি হয়।

সূত্র : দ্য ওয়াল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত