সিঁড়ি দিয়ে টানা ওঠানামা করলে কি কোনও উপকার পাওয়া যায়, জেনে নিন

| আপডেট :  ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৬  | প্রকাশিত :  ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:৫৬

আজকের ব্যস্ত শহুরে জীবনে লিফট আর এসকেলেটর এতটাই হাতের কাছে যে, সিঁড়ি ব্যবহারের কথা অনেকেই ভাবেন না। অথচ প্রতিদিন কয়েক মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করাই হতে পারে সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর ব্যায়ামগুলোর একটি। নিয়মিত এই অভ্যাস শুধু কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যই উন্নত করে না, শরীরের পেশি গঠন, সহনশীলতা, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণেও এনে দিতে পারে দারুণ পরিবর্তন।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার কী কী উপকার রয়েছে, আর কারা এই ব্যায়ামটি বেশি সময় করা থেকে বিরত থাকবেন—চলুন জেনে নেওয়া যাক।

১. সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার শারীরিক উপকারিতা

সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা একটি ভারবহনকারী ব্যায়াম, যা পুরো শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে।

ক. হৃদযন্ত্র ও ক্যালোরি খরচ

কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য : সিঁড়ি বেয়ে ওঠা হৃদস্পন্দনকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা হার্টকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ক্যালোরি খরচ : দ্রুত হাঁটা বা জগিং করার চেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে প্রতি মিনিটে বেশি ক্যালোরি খরচ হয়। এটি চর্বি কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর।

খ. পেশি গঠন ও হাড়ের স্বাস্থ্য

পেশির কার্যকারিতা : সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় প্রধানত পা এবং নিতম্বের পেশিগুলো (কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিংস, গ্লুটস) সক্রিয় হয়। এটি এই পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে।

হাড়ের ঘনত্ব : এটি একটি ভারবহনকারী ব্যায়াম হওয়ায় নিয়মিত অনুশীলন হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমায়।

২. কাদের এই কাজ বেশিক্ষণ করা উচিত নয়?

যদিও সিঁড়ি ওঠা উপকারী, তবে কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক পরিস্থিতিতে এই কাজ দীর্ঘক্ষণ ধরে বা উচ্চ তীব্রতায় করা ক্ষতিকর হতে পারে।

 শারীরিক অবস্থা
 বিপদ কেন
 পরামর্শ

হাঁটুর সমস্যা

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হাঁটুর জয়েন্টে শরীরের ওজনের প্রায় ৩ থেকে ৭ গুণ বেশি চাপ পড়ে।  

অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর পুরোনো ব্যথা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হালকা ব্যায়াম বা সাঁতারের মতো বিকল্প বেছে নিন।

গোড়ালি বা পায়ের পাতার আঘাত
এই ধরনের ব্যায়াম গোড়ালি এবং পায়ের পাতার পেশি ও জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
আঘাত সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত সিঁড়ি ওঠা এড়িয়ে চলুন।

তীব্র কার্ডিয়াক সমস্যা
তীব্র হৃদরোগ বা গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার কারণে হার্টের ওপর হঠাৎ অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে।
হৃদরোগীরা বা যাদের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন আছে, তাদের চিকিৎসকের ছাড়পত্র নিয়েই এই ব্যায়াম করা উচিত।

ভারসাম্যহীনতা বা মাথা ঘোরা
সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভারসাম্যহীনতার সমস্যা থাকলে সাবধানে সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত।
প্রয়োজনে রেলিং ধরে ধীরে ধীরে হাঁটুন।

কীভাবে এই অভ্যাস শুরু করবেন

যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে, তবে প্রতিদিনের রুটিনে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে এই অভ্যাস শুরু করতে পারেন:

ধীরে শুরু করুন : প্রথমে দিনে ৫-১০ মিনিট সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করুন।

গতি বাড়ান : একবার স্বচ্ছন্দবোধ করলে ধীরে ধীরে সময় এবং গতি বাড়ান।

সঠিক জুতা : আঘাত এড়াতে ভালো গ্রিপযুক্ত আরামদায়ক জুতা পরে এই ব্যায়াম করুন।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা হলো ক্যালোরি পোড়ানো, হৃদযন্ত্র শক্তিশালী করা এবং পেশি টোন করার একটি চমৎকার উপায়। তবে 
হাঁটুবা হৃদরোগের মতো সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এই কাজ বেশি ক্ষণ ধরে করা উচিত নয়।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত