রাজবাড়ীতে আ.লীগ নেতার ডিগবাজি, করছেন দখলদারি
রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগ নেতা ডিগবাজি দিয়ে বিএনপির হাত ধরে সন্ত্রাসী কায়দায় করছেন দখলদারি। জেলার সোনাপুর বাজারের ব্যবসায়ী সৈয়দ রুবেল হোসেনের সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মুন্নু সিকদারের বিরুদ্ধে।
দখলের সময় রুবেলের বাড়িতে থাকা সোনাদানাসহ সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যায় মুন্নু। মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করা হয় মা-বাবা ও বোনসহ পরিবারের ৭ সদস্যকে। সেদিনের সেই হামলার ক্ষত নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রুবেলের ছোট্ট ছেলে। এতেও ক্ষান্ত হননি তিনি। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় পরিবারটিকে। এখনো তাদের দোকানগুলো দখল করে আছেন মুন্নু সিকদার।
ভুক্তভোগী সৈয়দ রুবেল হোসেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর বাজারের বাসিন্দা সৈয়দ ইউসুফ হোসেনের ছেলে। এরই মধ্যে পরিবারটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বালিয়াকান্দি থানার ওসি বরাবর লিখত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত মুন্নু সিকদার বালিয়াকান্দি উপজেলার ৩নং নবাবপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত আজিজ সিকদার। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে মুন্নু সিকদার অস্তধারী সন্ত্রাসী। তিনি সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের আশীর্বাদপুষ্ট। অপরদিকে তিনি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে জানা যায়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা হাসানুল হক ইনুর পিএস আশরাফুল ইসলাম ঝন্টু ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ২০১৩ সালের কোনো এক সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানের সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ে রুবেল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। তাদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয় রুবেলসহ পরিবারের ৭ সদস্য। এসময় হামলাকারীরা বাড়িতে থাকা মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। দখল করে নেয় বাজারের মূল্যবান সম্পদ দোকানপাট। তারপর থেকে ঝন্টুর ছোট ভাই মুন্নু সিকদার সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের দাপট দেখিয়ে বাড়ির বিভিন্ন পথ আটকে দেয়। এখনো হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে পরিবারটিকে নিঃস্ব করে ফেলেছে।
এসব বিষয় নিয়ে এ প্রতিবেদক যখন সংবাদ সংগ্রহে কাজ করতে থাকে তখনই সামনে আসে মুন্নু সিকদারের নতুন এক চরিত্র। যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া ছবিতে দেখা যায় সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম- মুন্নু সিকদারের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করছেন। অন্যদিকে আরেক ছবিতে দেখা যায় এই মুন্নু সিকদার নবাবপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পোস্টার-ফেস্টুন ছাপিয়েছেন।
এসব বিষয় সৈয়দ রুবেল হোসেন কালবেলাকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঝন্টু-মুন্নুর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আমরা কোনো রাজনীতি করি না। তবে বিএনপি মাইন্ডের হওয়ায় ওরা ২০১৩ সাল থেকে আমাদের দোকানপাট দখল করে রেখেছে। সেসময় আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। আমি পরিবার নিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বর্তমান সরকারের কাছে আমার চাওয়া এই জুলুমবাজের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। আমার দোকানপাট ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।
অভিযুক্ত মুন্নু সিকদারের সঙ্গে দোকানপাট দখলের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার পিতার ওয়ারিশ সূত্রের জমিতে রুবেলের বাবা দোকান ঘরে করেছিল। আমরা সেগুলো ২০১৩ সালে দখলে নিয়েছি। সে সময় তারা কয়েক জন আহত হয়, আমরাও আহত হয়েছিলাম। এখন মামলা চলমান আছে। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগ করি। তবে ২০১৫ সাল থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি। আমার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের লোকজন সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে মিতুল হাকিমের কাছে আমাকে নিয়ে কথা চালাচালি করছিল। আমাকে জিল্লুল হাকিম ডেকে নিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দিছে। এটা একপ্রকার জোর করে দিছে। আমি এখন মূলত বিএনপি করি।’
আশরাফুল ইসলাম ঝন্টু সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও কল রিসিভ হয়নি।
বালিয়াকান্দি থানার ওসি জামাল উদ্দিন কালবেলাকে জানান, রুবেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি জমিসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত চলমান আছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাসিবুল হাসান কালবেলাকে বলেন, জমিসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত