গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে : তারেক রহমান
গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে চলমান যাত্রা তা বাধাগ্রস্ত করতে কিন্তু এরই মধ্যে নানারকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরচক্র মাথাচাড়া দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেছে। অপশক্তি দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত হয়েছে।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত না হতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আমাদের কর্তব্য। সেজন্য যথাযথ আইনগত এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি৷ তাদের একদিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন, অপরদিকে অবশ্যই জনগণের আদালতে বিচারে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিস্থিতেও ফেলতে হবে।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলেই জনগণ গণহত্যাকারী, খুনি, লুটেরা এবং তাদের দোসরদের রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করে দিতে সক্ষম হবে। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন।
তারেক রহমান বলেন, সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিগত পলাতক স্বৈরাচারের সময় গণমাধ্যমের অধিকাংশ শাখায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা যে কোনো মানুষের মধ্যেই যে কোনো বিষয়ে যে কোনো ইস্যুতে দ্বিমত, ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটিই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য। ভিন্নমতকে শত্রুতা কিংবা নির্লজ্জ দলাদলিতে পরিণত করলে কি হতে পারে তা গত দেড় দশকে জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আর স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র, বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, একটি নির্বাচনের জন্যই গণঅভ্যুত্থান হয়নি- এটা যেমন বাস্তবতা। অপরদিকে আরেকটি নির্মম বাস্তবতা ছিল, জনগণকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন রেখে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বারবার সরকার গঠনের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নির্বাচন একটি মুখ্য বিষয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানকে শুধু একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হিসেবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করলে সেটি কোনো বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক চিন্তা নয়। বরং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ পায়। ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের মালিকানার সম্পর্ক তৈরি হয়।
তিনি বলেন, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন যারা এমন প্রশ্ন তুলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চান তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রম শেষ হওয়ার বিষয় নয়৷ একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন এগিয়ে নিয়ে যায়। কারণ সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া প্রথাগত সংস্কার অর্থহীন।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কমপক্ষে ৬ সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে কমপক্ষে ২ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সংগঠনের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মী এ লড়াইয়ে নিহত হয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চালনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব (বিএফইউজে) কাদের গণি চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এমএ আজিজ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, দিদারুল আলম ও খন্দকার আলমগীর হোসেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত