ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিপজ্জনক তথ্য ফাঁস
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা চালানোর গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ করেছে।
এই ফাঁসকে ইসরায়েলের ইতিহাসে অন্যতম গুরুতর ও বিপজ্জনক তথ্য ফাঁস বলে অভিহিত করেছেন দেশটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার এক পর্যায়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সরাসরি মার্কিন সহায়তায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল।
বিষয়টি ইসরায়েলের নিরাপত্তা মহলে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছিল এবং বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কৌশলগত বিকল্পও বিবেচনায় আনা হয়েছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনার পর থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য আক্রমণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই পরিকল্পনার পক্ষে মত দেন।
নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, সম্ভাব্য আক্রমণ দুটি রূপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল—বিশাল বিমান হামলা, বিমান ও কমান্ডো অভিযানের সমন্বিত রূপ, যেমনটি আগে ইসরায়েল সিরিয়ার গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে করেছিল।
তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েল মার্কিন অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং ওয়াশিংটনের সমর্থন ছাড়া এগোতে রাজি ছিল না।
এদিকে, ফাঁস হওয়া এই গোপন পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধীরা দাবি করছেন, এই পরিকল্পনার তথ্য ফাঁসের জন্য তিনিই দায়ী।
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, আমি নিউইয়র্ক টাইমসের পুরো প্রতিবেদনটি পড়েছি। আমার মনে হয়েছে, আমরা ভাগ্যবান যে সিরিয়া ও ইরাকে পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার সময় নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।
তার দাবি, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানের বিরুদ্ধে ‘কঠোর কিছু না করার’ সমালোচনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পরিকল্পনাটি জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন।
এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন দেশটির আরও কয়েকজন রাজনীতিবিদ, যারা মনে করেন এই তথ্য ফাঁস জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ইমেজ রক্ষার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তা ঘটিয়েছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল চেয়েছিল এই আক্রমণ পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল যাতে তাকে এই পরিকল্পনায় যুক্ত করা যায়।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা এ ধরনের অভিযানে যোগদানের বিরোধিতা করেন এবং পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু চুক্তি পুনরায় আলোচনার উদ্যোগে জোর দেন।
এদিকে এই তথ্য ফাঁস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব এমনিতেই উত্তপ্ত, তার ওপর এমন স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়তে পারে। বিশেষ করে, ইসরায়েলের এই ধরনের প্রস্তুতি ইরানকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উসকে দিতে পারে, যার প্রভাব সারা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদন। যেখানে একদিকে রয়েছে গোপন সামরিক পরিকল্পনার মারাত্মক কৌশল, অন্যদিকে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব।
বিশ্বরাজনীতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে যদি এই ধরনের স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস অব্যাহত থাকে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত