রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া আরেক বাংলাদেশি যুবক নিহত
রাশিয়া গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির নামে রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়ে মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) তার এক সহযোদ্ধা রাশিয়া থেকে নিহত ওই যুবকের গ্রামের বাড়িতে এ খবর জানান।
নিহত আকরাম হোসেন আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে সংসারের সচ্ছলতা আর নিজের ভবিষ্যতের আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমান মোহাম্মদ আকরাম। তিন ভাই ও দুই বোনসহ পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আকরাম ছিল সবার বড়। আকরামদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী দিনমজুর বাবা মোরশেদ মিয়া স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছিলেন। এরই মধ্যে আকরামের একজন বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন আকরামের বাবা মোরশেদ। এ অবস্থায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় বিগত প্রায় ১১ মাস আগে আকরামকে রাশিয়া পাঠানো হয়।
রাশিয়ায় যাবার পর বিগত আট মাস সেখানকার একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে চাকরি করে আকরাম। বেতন খুব বেশি না পেলেও তার উপার্জনে পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। ফলে মোরশেদ মিয়ার অসচ্ছল পরিবারটি সচ্ছলতার স্বপ্ন বুনতে থাকে রাশিয়ায় প্রবাসী আকরামকে নিয়ে। কিন্তু বিগত আড়াই মাস আগে আকরাম দালালের প্রলোভনে পড়ে রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যুক্ত হয়ে অংশ নেন ইউক্রেন যুদ্ধে। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ছবিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা।
নিহত আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া জানান, কোম্পানিতে ভালো বেতন না পাওয়ায় দালালদের প্রলোভনে পড়ে বিগত আড়াই মাস আগে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে আকরাম যোগ দেন রুশ সেনাবাহিনীতে। শর্ত ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সম্মুখসারিতে থাকার। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলে আকরাম জানিয়েছেন- তার আর ফিরে আসার উপায় নেই। এরই মধ্যে আকরাম বাবাকে জানিয়েছিলেন তার রাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে।
আকরামের মা মোবিনা বেগম জানান, যুদ্ধ চলাকালে ছেলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও গত ১৩ এপ্রিল থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আকরামের। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতজনরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) তার এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানান, যুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছেন। ফোনে জানানো হয়, আকরামের ইউনিটের কয়েকজন যোদ্ধা ইউক্রেন বাহিনীর মিসাইল হামলায় মারা গেছেন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আকরামের পরিণতিও একই হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এদিকে আকরামের মৃত্যুর খবরে তার বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছেলের ছবি নিয়ে মা মোবিনা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শোকে হতবিহ্বল পরিবারের অন্য সদস্যরা। নিহতের লাশ দেশে আনতে ও ক্ষতিপূরণ পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছেন পরিবারের সদস্যরা।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আশুগঞ্জের যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি অবগত হয়েছি। নিহতের মরদেহ ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ গিয়ে নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশি আরেক যুবক ইয়াসিন শেখ। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলার মরিচালি গ্রামের মৃত সাত্তার হোসেনের সন্তান। জানা গেছে, তিনিও দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির নামে অংশ নিয়েছিলেন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত