চুলের চিকিৎসায় পিআরপি: সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

| আপডেট :  ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০১  | প্রকাশিত :  ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০১

চুল পড়া বা টাক সমস্যা সমাধানে আজকাল প্লাটিলেট-রিচ প্লাজমা (পিআরপি) থেরাপি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি নন-সার্জিক্যাল পদ্ধতি, যেখানে রোগীর নিজের রক্ত থেকে প্রাপ্ত প্লাটিলেট ব্যবহার করে চুলের ফলিকল পুনরুজ্জীবিত করা হয়; কিন্তু কারা এই চিকিৎসা নিতে পারবেন, এর কার্যকারিতা কেমন এবং কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়া সম্ভব, তা জানা দরকার।

পিআরপি কীভাবে কাজ করে: পিআরপি থেরাপিতে রোগীর রক্ত নেওয়ার পর তা সেন্ট্রিফিউজ করে প্লাটিলেট-রিচ প্লাজমা আলাদা করা হয়। এই প্লাজমায় থাকে বৃদ্ধি উপাদান (Growth Factors), যা চুলের গ্রন্থিগুলোকে সক্রিয় করে, রক্ত সরবরাহ বাড়ায় এবং নতুন চুল গজাতে উদ্দীপনা দেয়। সাধারণত ৪ থেকে ৬ সেশনের কোর্স করানো হয়, প্রতি সেশনের ব্যবধান তিন থেকে চার সপ্তাহ।

কখন পিআরপি নেবেন: পুরুষদের অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া (পুরুষত্বহীন টাক) এবং নারীদের হরমোনাল বা টেলোজেন এফ্লুভিয়ামের (হঠাৎ চুল পাতলা হয়ে যাওয়া) ক্ষেত্রে পিআরপি কার্যকর। প্রাথমিক পর্যায়ে চুল পড়া শুরু হলে দ্রুত চিকিৎসা নিলে ফল ভালো আসে। চুলের গ্রন্থি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে পিআরপি তেমন কাজ না-ও করতে পারে।

বয়স: ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী রোগীদের জন্য উপযুক্ত।

কখন পিআরপি কম কার্যকর হয়: চুল পড়ার কারণ যদি জিনগত, অটোইমিউন রোগ বা পুষ্টির ঘাটতিজনিত হয়, তবে শুধু পিআরপিই যথেষ্ট নয়। ধূমপান, ক্রনিক স্ট্রেস বা হরমোনাল অসামঞ্জস্যতা থাকলে ফল কম দেখা যায়।

কত দিন স্থায়ী হয়: পিআরপির ফল সাধারণত ছয় মাস থেকে দুই বছর স্থায়ী হয়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বার্ষিক মেইনটেন্যান্স সেশন নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

দীর্ঘমেয়াদি সুফল পেতে করণীয়: পুষ্টিকর খাবার—প্রোটিন, বায়োটিন, আয়রন, জিঙ্ক ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ ডায়েট চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট—যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন চুল পড়া কমায়। রাসায়নিক এড়ানো—অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট না নেওয়া। নিয়মিত ফলোআপ—চিকিৎসকের পরামর্শে অতিরিক্ত সেশন বা সহায়ক থেরাপি (মিনোক্সিডিল) নিতে পারেন।

সতর্কতা: পিআরপি নিরাপদ হলেও ডায়াবেটিস, রক্তজনিত রোগ বা স্কাল্প ইনফেকশন থাকলে চিকিৎসককে জানাতে হবে। পিআরপি আধুনিক চিকিৎসায় একটি কার্যকর সমাধান, তবে সঠিক রোগী বাছাই ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে এটি যুক্ত হলে দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া সম্ভব। চুল পড়ার ধরন বুঝে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন।

ডা. আশরাফুল হক

সহকারী অধ্যাপক

ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত