নদীগর্ভে বেড়িবাঁধের একাংশ, মারাত্মক ঝুঁকিতে ১৫ গ্রাম
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে বাঁধ সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহড়তলী ও চুনকুড়ি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের হাজারো মানুষ।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পেলে হঠাৎ করে ফাটল লাগা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এদিকে ফাটল লাগা বেড়িবাঁধের একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় চুনকুড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী গ্রামবাসীর মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত ভাঙ্গনকবলিত বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে হরিনগর বাজারের কাছে সিংহরতলী গ্রামের চুলকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধের ৩০-৩৫ মিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ ফাটল দেখা দেয়। এসময় স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বেড়িবাঁধের ফাটল পয়েন্টে আধুনিক মানের জিও টিউব দিয়ে বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করে।
তারা আরও জানান, কিন্তু এ ঘটনার একদিন পরেই রোববার দুপুরের জোয়ারের সময় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে হঠাৎ করে ফাটল দেখা দেওয়া বাঁধের একাংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দ্রুত এই ভাঙন পয়েন্ট সংস্কার করতে না পারলে নদীর প্রবল স্রোতে সম্পূর্ণ বাঁধ ভেঙে মুন্সিগঞ্জ ও হরিনগর ইউনিয়নসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়তে পারে। ক্ষতি হতে পারে বসতবাড়ি, চিংড়িঘের, মিঠা পানির পুকুর, ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব হোসেন বলেন, বাঁধের ফাটলের একাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে এখনো জোয়ার বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্রোতের টানে বাঁধের বাকি অংশ যদি ভেঙে যায় তাহলে শ্যামনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড চেষ্টা করছে বাঁধটি সংস্কার করার জন্য। কিন্তু জানি না কয়দিন লাগবে। বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে ফাটলের খবর শুনে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) প্রিন্স রেজাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সিংহড়তলী এলাকার ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোছা. রনী খাতুন বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সকাল-সন্ধ্যা কাজ করছে বাঁধটি সংস্কারের জন্য। তিনি এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে বাঁধ সংস্কার কাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দীন সানি কালবেলাকে বলেন, চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধে গতকাল শনিবার ৩০-৩৫ মিটার জায়গাজুড়ে ফাটল শুরু হয়। শনিবার থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি হঠাৎ করে রোববার সকালে বাঁধের একাংশ ভেঙে নদীতে দেবে যায়। ফলে ৩০ মিটার এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যাতে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে না পারে সেই জন্য জিও টিউব দিয়ে ৫০/৬০ মিটার বিকল্প রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ চলছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এছাড়াও শ্যামনগরের কয়েকটি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, সেগুলোর কাজও শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর বাজারের সন্নিকটে সিংহরতলী গ্রামে চুনকুড়ি নদীর উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ফাটল দেখা দেয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত