চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি হোক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী
একদল তরুণ ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে, তাদের লক্ষ্য শাহাবাগ থেকে যমুনা অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন। পথিমধ্যে তারা নানান পুলিশি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, কিন্তু তাদের থামানো যাচ্ছে না।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ বা বিক্ষোভ প্রদর্শন নিষিদ্ধ।
কিন্তু এতকিছুর পরেও তাদের থামানো গেল না, তারা টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড আর বুলেটের ভয় উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে এগিয়েই চলছে। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজন হতাহত হয়েছে। কিন্তু এসব তাদের থামাতে পারছে না।
আর এই তরুণরা কেনই বা থামবে? কারন যে যৌক্তিক দাবিটি নিয়ে তারা দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ বিগত সরকারের আমলা, এমপি, মন্ত্রী, হুইপ, স্পিকার, উপদেষ্টা, বিচারপতি এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছে; সবাই আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। এ পর্যন্ত দাবিটি মহান জাতীয় সংসদে ৭৬ বার উত্থাপিত হয়েছে। এ দাবিকে কেন্দ্র করে ৪ বার কণ্ঠভোটের আয়োজন করা হয়েছে। ৫ বার জনপ্রশানের স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে। ৫ বার সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করেছে। তারপরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এই তরুণরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কিন্তু তারা বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার। তারা জানে বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববরেণ্য নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন তাদের সরকারপ্রধান। এরা নিজেরাও বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের অংশীদার। তাই তারা মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারলে নিশ্চয়ই তিনি এই যৌক্তিক দাবিটি মেনে নেবেন। আর সে বিশ্বাস থেকেই তাদের এই দুঃসাহসিক পদযাত্রা।
অবশেষে তাদের দীর্ঘদিনের এই প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও হতাহতের পরে প্রধান উপদেষ্টা দাবিটি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করেন। দাবিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনাপূর্বক সুনির্দিষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিবেদন কমিটি গঠন করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরকার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কমিটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে এবং জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
২০১২ সালের শুরুতে এ আন্দোলনটি ঢাকার শাহাবাগ ও প্রেসক্লাব কেন্দ্রিক হলেও পরে আস্তে আস্তে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সারা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় একসঙ্গে একই সময়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় কয়েকবার।
এ ছাড়া রাজধানীর শাহাবাগ ও প্রেসক্লাবে নিয়মিত চলতে থাকে নানা ধরনের কর্মসূচি। এর মধ্যে অনেকবার অন্দোলনকারীরা পুলিশের লাঠিপেটা, গ্রেপ্তার ও কারাবরণসহ নানান নির্যাতনের শিকার হয়। শীতের রাতে প্রেসক্লাবের সামনে অনশন করে বহুবার। শুধু এই একটি দাবিকে কেন্দ্র করে এ যাবৎ প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মসূচি হয়েছে।
বিভিন্ন সময় জাতীয় পত্র-পত্রিকাগুলো এই আন্দোলনের চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরে। পত্রিকায় কলামিস্টরা এ দাবি বাস্তবায়নের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সকল সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে রাষ্ট্রের সমস্ত এমপি-মন্ত্রীসহ বিভিন্ন মহলের কাছে এই দাবির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষার্থীরা দেশের বেকারত্ব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সেশনজটের চরম দুর্ভোগ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৈষম্যসহ বিভিন্ন যুক্তিতর্ক সংবলিত স্মারকলিপি বারবার প্রদান করে।
ফলে এ দাবিটি বারবার মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপন হয়েছে। গত সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং এর সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বয়সসীমা ৩৫ করার জন্য সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
৩৫ প্রত্যাশীদের সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রহসন করা হয়েছে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল। কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছিল। সরকার গঠনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, খুব শীঘ্রই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হবে। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বেসরকারি বিল আকারে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তিনি ছাড়াও সরকারি এবং বিরোধী দল মিলে আরও ১০ জন সংসদ সদস্য এই দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তখন উপস্থিত সকল সংসদ সদস্য এর পক্ষে হ্যাঁ বলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারের পক্ষ হয়ে এর বিপক্ষে কথা বলেন…।
সদস্য, আলোর ইশকুল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত