গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

গাজায় এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে। জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষে ভুগছে। এ মূল্যায়নে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই সংকট ‘পুরোপুরি মানবসৃষ্ট’ এবং এর জন্য ইসরায়েলের নীতি দায়ী।
সীমান্তে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে থাকলেও সেগুলো গাজায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে দ্রুত অনাহার, অপুষ্টি ও মৃত্যুর হার বেড়েছে।
দুর্ভিক্ষ মূল্যায়নে আইপিসি তিনটি সূচক ব্যবহার করে—অনাহার, শিশুদের অপুষ্টি এবং মৃত্যু। গাজায় তিনটিই পূর্ণ হয়েছে। প্রতি পাঁচ পরিবারের একটি তীব্র খাদ্য ঘাটতিতে পড়েছে, তিন শিশুর একজন গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে এবং প্রতিদিন হাজারে দুজন মারা যাচ্ছে ক্ষুধা ও রোগে। বাস্তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অপুষ্টিতে অন্তত ২৭৩ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১১২ জন শিশু।
দুর্ভিক্ষের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দীর্ঘ অবরোধ ও খাদ্য প্রবেশের কড়াকড়ির কারণে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অবরোধ আরও কঠোর করে। ২০২৫ সালের মার্চে প্রায় তিন মাসের জন্য সম্পূর্ণ অবরোধ দিলে গাজায় খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছায়।
পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সীমিত আকারে কিছু ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হলেও ইসরায়েল জাতিসংঘের বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে নতুন বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ চালু করে। এর ফলে আগের ৪০০ বিতরণকেন্দ্র কমে মাত্র চারটিতে নেমে আসে। খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিদিন ফিলিস্তিনিরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটে। জাতিসংঘের হিসাবে মে থেকে অন্তত ৯৯৪ জন এভাবে নিহত হয়েছেন।
সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ ট্রাক ঢোকা দরকার, অথচ বাস্তবে এর অর্ধেকেরও কম ঢুকছে। বাজারে খাবারের দাম এত বেশি যে অনেকেই কিনতে পারছে না— কখনও ১ কেজি আটা ৮৫ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। এ অবস্থাকে আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের দায়িত্ব খাদ্য ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা, অথচ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত

