খন্দকার মোশতাককে ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়ে ঢাবি শিক্ষকের ক্ষমা প্রার্থনা

| আপডেট :  ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১১:২০  | প্রকাশিত :  ১৮ এপ্রিল ২০২২, ১১:২০

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের এক আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি খন্দকার মুশতাক আহমদের প্রতি একইসঙ্গে ‘শ্রদ্ধা এবং ঘৃণা’ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ। এতে তীব্র বিরোধিতার ‍মুখে পড়েন তিনি। পরে বিষয়টি ‘ভুলবশত হয়েছে’ উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ওই শিক্ষক।

রবিবার (১৭ এপ্রিল) ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা সূত্রে জানা যায়, ওই আলোচনা সভায় নিজের বক্তব্য দেওয়ার সময় অধ্যাপক রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় তিনি মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রণালয়ে যেসব মন্ত্রী ছিলেন তাদের নাম উল্লেখ করেন। একপর্যায়ে সবার সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের নামও উচ্চারণ করে সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান অধ্যাপক রহমত উল্লাহ। তবে এর পরপরই খন্দকার মোশতাকের প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন তিনি।

তবে ‘শ্রদ্ধা জানানোর’ অংশে অন্যান্যদের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের নাম উল্লেখ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত কয়েকজন। তার বক্তব্যের বিতর্কিত অংশটুকু ‘এক্সপাঞ্জ’ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতি তাৎক্ষণিক দৃষ্টিপাত করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বক্তব্যের ‘শ্রদ্ধা জানানো’ অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেন।

সভার এ বিষয় ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি ‘ভুলবশত হয়েছে’ উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন এবং তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়েছে। সে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার প্রস্তাবেও যুক্ত ছিল। কাজেই শিক্ষক সমিতির সভাপতি যে বক্তব্য রেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গ্রহণ করতে পারবে না। পরে উপাচার্য তার নিজের বক্তব্যে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করা হয়েছে। (মোশতাকের নাম) এককভাবে নয়, আরও কয়েকটা নামের সঙ্গে বোধহয় উচ্চারণ করেছিলেন। পরে একজন আলোচক তার বক্তব্যে বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে আনেন। আমি ওই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করি।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, আমি বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। বিষয়টি এমন নয়, আমি শ্রদ্ধা জানিয়েছি মুজিবনগর সরকারের প্রতি। ব্যক্তিগতভাবে মোশতাকের যে হীন কর্মকাণ্ড রয়েছে তার সমালোচনা করেছি এবং তার প্রতি নিন্দাও জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো কাদের মাঝে ভাগ হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করেছি। ইতিহাসে মোশতাকের হীন কাজের কথা উল্লেখ আছে আমি তাও উল্লেখ করেছি। ইতিহাস বিকৃত করার ইচ্ছে এবং সাহস কোনোটিই আমার নেই। যদি কোনোভাবে আমি তা করে থাকি, তা ভুলবশত হয়েছে এবং আমি এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত