ড. ইউনূস ও ইলন মাস্কের ফোনালাপের নেপথ্যে যিনি

| আপডেট :  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৮  | প্রকাশিত :  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৮

ড. ইউনুস এবং ইলন মাস্কের ভিডিও কনফারেন্সের নেপথ্যে ছিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জনপ্রিয় সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ার।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান।

ড. কনক সারোয়ার জানান, ড. ইউনুস এবং ইলন মাস্কের ভিডিও কনফারেন্সের নেপথ্যে ছিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী! বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় তাদের মধ্যে ওই কথোপকথন হয়।

তিনি জানান, এই কথোপকথনের জন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট অ্যাডভাইজার রিচার্ড গ্রিফিথসকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুশফিকুল এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘প্রিয় বন্ধু রিচার্ড গ্রিফিথসকে অশেষ ধন্যবাদ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ইলন মাস্কের মধ্যে একটি অসাধারণ কথোপকথনের আয়োজন করার জন্য। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে স্পেসএক্স ও স্টারলিংক প্রযুক্তির বিকাশ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হবে। যা উদ্ভাবন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিরাট সুযোগ তৈরি করবে। শুরুতেই এর অংশ হতে পেরে আমি দারুণ উৎফুল্ল!’

কনক সরওয়ার আরও জানান, মুশফিকুল ফজল আনসারী অপর এক টুইটে স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জবাবে লরেন, মুশফিকুল ফজল আনসারীর বার্তাটি রিটুইট করে ধন্যবাদ জানান। মুশফিক তাতে লিখেন, ‘লরেন আপনি ও রিচার্ডের এই অসাধারণ সহায়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ড. ইউনূস ও ইলনের মধ্যকার কল বাস্তবায়নের অংশ হতে পেরে আমিও আনন্দিত! আপনার প্রচেষ্টা এই সংযোগকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনতে এবং উদ্ভাবন, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অসাধারণ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে সহায়ক হবে।’

সবশেষ এই সাংবাদিক জানান, গত নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশের জন‍্য অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ নেওয়ার জন‍্য মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ধন্যবাদ।

এদিকে, ওইদিনের ফোনালাপে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ককে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, স্পেস এক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার ও গ্লোবাল এনগেজমেন্ট অ্যাডভাইজার রিচার্ড গ্রিফিথস।

আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগের রূপান্তরমূলক প্রভাব, বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নারী এবং প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উচ্চগতির ও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ কীভাবে বাংলাদেশের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে পারে, সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষমতায়ন এবং দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জাতীয় সীমানার বাইরে প্রবেশাধিকার দেওয়ার উপায় নিয়ে এ সময় আলোচনা করা হয়।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের কানেক্টিভিটি যুক্ত করা হলে লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে দেশকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত করা হবে।

তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রযুক্তিচালিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে মাস্কের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ড. ইউনূস বলেন, স্টারলিংক গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ ফোনের একটি সম্প্রসারিত অংশ হতে পারে, যা গ্রামের নারী ও তরুণদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তারা বৈশ্বিক উদ্যোক্তায় পরিণত হবে।

ইলন মাস্ক গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করে দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাবের কথা সম্পর্কে জানান।

ইলন মাস্ক বলেন, তিনি অনেক বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ পল্লী ফোনের উভয়ের কাজের সঙ্গে পরিচিত।

স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগানো বাংলাদেশে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে বলে তিনি দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেন।

ড. ইউনূস স্টারলিংক সেবার সম্ভাব্য চালুর জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং জাতীয় উন্নয়নে এই উদ্যোগের তাৎপর্য তুলে ধরেন, যার প্রতি মাস্ক ইতিবাচক সাড়া দেন। মাস্ক বলেন, ‘আমি এটির জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।’

এই সম্পৃক্ততা বাংলাদেশে উন্নত স্যাটেলাইট সংযোগ আনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং দেশজুড়ে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উভয় পক্ষ এই উদ্যোগে দ্রুত অগ্রগতি আনতে সম্মত হয়েছে এবং হাই রিপ্রেজেন্টটটিভ খলিলুর রহমান, মিসেস ড্রায়ার এবং মি. গ্রিফিথসকে আরও কাজের সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইলন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দিয়েছেন। এই বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কাজ করবেন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সের (টুইটার) মালিক।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত