‘৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে’
সনাতনীরা এ দেশের সন্তান। আমরা এ দেশে জন্মেছি এবং শান্তিতে এ দেশে থাকতে চাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে জীবনযাপন করতে পারি এজন্য আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা অন্যায় করব না এবং অন্যায়ের শিকার যাতে না হই সে নিশ্চয়তা চাই। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সনাতন সম্প্রদায়ের জান-মাল রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
এতে অংশ নেন বিভাগের ৮ জেলার ৫৮টি উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও দুটি পৌরসভার আড়াই শতাধিক প্রতিনিধি। সভার শুরুতে পরিষদের প্রয়াত নেতাদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় তৃণমূল পর্যায়ের সনাতন নেতারা তাদের বর্তমান পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, ৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এ ছাড়া মামলার আসামি হয়ে ঘরছাড়া হয়েছেন হাজারো সনাতনী। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও শুধু হিন্দু হওয়ার কারণে আওয়ামী ট্যাগ লাগিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত নীরব চাঁদাবাজির শিকার হয়ে সনাতনীরা কাউকে জানাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সহযোগিতা চান তারা।
পূজা উদযাপন পরিষদের লালমনিরহাট জেলা শাখার সহসভাপতি বলেন, ৫ আগস্টের পর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় লালমনিরহাটের ১০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু এ ক্ষতিপূরণ দেবে কে।
দিনাজপুর থেকে আসা এক নেতা জানান, জেলার চিরিরবন্দর ও বিরলের সভাপতি, সদরের সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা কমিটির অনেক সদস্য মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া ৫ ও ৬ আগস্ট শুধু গাইবান্ধায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হিন্দুরা হামলা ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন।
প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তারা বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। সনাতনীদের অধিকার আদায়ে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অনেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ায় নানা জটিলতায় পড়ছে সনাতনীরা। তারা নিজেদের স্বার্থে এ সংগঠনকে ব্যবহার করেছে। আগামী দিনে সংগঠনের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে না রাখা ও পূজা উদযাপন পরিষদকে লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন হিসেবে তারা দেখতে চান না বলেও জানান।
এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, সনাতনীরা শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায়। তারা বিশৃঙ্খলায় বিশ্বাস করে না। সনাতনীরা বিশ্বাস করে মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়ে প্রিয়। আমরা এ দেশের নাগরিক, এ দেশ ছেড়ে আমরা কোথাও যাব না। সনাতনীরা অন্য কোনো ধর্মের মানুষের ওপর হামলা করেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন এলে সরকার পরিবর্তন হলে সনাতনীদের ওপর হামলা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ ঘটনা ঘটছে। কোনো সরকারের আমলেই হিন্দুদের ওপর হামলার বিচার হয়নি।
তারা আরও বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রত্যেকটি ঘটনার জন্য নিকটস্থ থানায় মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আদালতে যান। সেখানেও যদি মামলা না নেয়, আর্মি ক্যাম্পে যান, সেখানে আপনার কথা বলেন। তারপর সেখানেও যদি প্রতিকার না পান তাহলে কেন্দ্রে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও নির্যাতনের শিকার হিন্দুদের সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছে সেনাবাহিনী। তারা সনাতনীদের জান-মাল রক্ষায় পাশে থাকবে।
তারা আরও বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা পূজা উদযাপন পরিষদে থাকতে পারবেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে পারবে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি অশোক মাধব রায় বলেন, সনাতনীদের কথা শুনতে আমরা বিভাগে বিভাগে যাচ্ছি। তাদের সমস্যার কথাগুলো শুনছি। সভাগুলো অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। বিভাগীয় সমাবেশ শেষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে এবং সনাতনীদের সমস্যাগুলো প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী রামজীবন কুন্ডুর সভাপতিত্বে ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার রায়ের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব অশোক মাধব রায় ও প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন পূজা উদযাপন পরিষদ রংপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পার্থ বোস।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায়, গোপাল দেবনাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর হালদার, সহপ্রচার সম্পাদক অনয় মুখার্জি প্রমুখ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত