পৃথিবীতে একটিও মশা না থাকলে কী ঘটতে পারে?
মানবজাতির ইতিহাসে যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের কারণে প্রায় শত কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মশার কারণে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যার তুলনায় এটা নগণ্যই বলা যায়। দ্য নেচার জার্নালের তথ্য বলছে, গেল ৫০ হাজার বছরে পৃথিবীর যত মানুষ বেঁচেছিলেন তাদের প্রায় অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ এই ছোট্ট মশা।
প্রাণঘাতী এই ছোট্ট পতঙ্গ বিশেষ একটি রোগের বিস্তার ঘটানোর সক্ষমতা রাখে। এই রোগের নাম ম্যালেরিয়া। শুধু ম্যালেরিয়াই নয় জিকা, ওয়েস্ট নাইল ও ডেঙ্গুর মতো আরও ভাইরাসবাহিত রোগও ছড়ায় মশা।
২০২২ সালে ৬ লাখ ২৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে কেবল ম্যালরিয়ায়। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে অ্যানোফিলিস গাম্বিয়া মশার উপস্থিতি খুব লক্ষ করা যায়। ২০২০ সালে দ্য প্রোসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়, এ মশাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণীর প্রজাতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
এমন প্রাণঘাতী এই প্রাণীটিকে কী তাহলে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে? আর পৃথিবী থেকে মশা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেই বা কী পরিণতি হবে? এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কী ঘটবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মশার প্রজাতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১০০টি প্রজাতি মানুষকে কামড়ায় এবং রোগ ছড়ায়। যেমন কামড় দিলেও কুলিসেটা প্রজাতির মশা মানুষকে দুর্বল করে দেওয়ার মতো কোনো রোগ বহন করে না। আবার কিছু প্রজাতির মশা আছে, যেগুলো বনে-জঙ্গলে থাকে। সেগুলো আবার বনে থাকা বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকেই নিজের খাবার জোগান নেয়। তাই মশা প্রজাতির মশাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার দরকার নেই। বরং পীত জ্বর ও জিকা ভাইরাস বিস্তারকারী অ্যাডিস অ্যাজিপ্টির মতো সমস্যাপূর্ণ মশাকে টার্গেট করা যেতে পারে।
আন্ডারস্ট্যান্ডিং অ্যানিমেল রিসার্চের তথ্য মতে, অ্যানোফেলিস ও কিউলেক্সের নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির মশাও মানুষের জন্য খুব বিপজ্জনক। এসব মশা ম্যালয়েরিয়া, ডেঙ্গু, ওয়েস্ট নাইল ফিভার, পীত জ্বর, জিকা, চিকুনগুনিয়া ও লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিসের মতো রোগ বহন করে।
সব মশা না মেরেও নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে বিপজ্জনক প্রজাতির মশাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রেও অপশন খুব সীমিত। এক ধরনের বিশেষ ব্যাকটেরিয়াবাহিত মশা ছড়িয়ে দিয়ে এভাবে স্বজাতি নিধনের কাজ ইতোমধ্যেই চলমান রয়েছে। এভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আরেকটি উপায় হচ্ছে, জেনেটিক্যালি মডিফাই করা মশা ছেড়ে দেওয়া। এসব মশার বংশধর বিস্তার করতে পারে না। কিন্তু মশা না থাকলে কিন্তু বাস্তুসংস্থানে পরিবর্তন ঘটতে পারে।
অবশ্য মশাবিহীন পৃথিবী নতুন কোনো বিষয় নয়। ১৮২৬ সালের আগ পর্যন্ত হাওয়াইয়ে কোনো মশাই ছিল না। পৃথিবীর আরও এমন জায়গা রয়েছে যেখানে মশা বাঁচতে কিংবা বংশ বিস্তার করতে পারে না। সেগুলো হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা ও আইসল্যান্ড। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অনেক মশা আছে যেগুলো মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ নয় বরং বাস্তুসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত