ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, আন্দোলনে উত্তাল রাবি

| আপডেট :  ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩১  | প্রকাশিত :  ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩১

সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

রোববার (০৯ মার্চ) দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তারা ধর্ষণের ঘটনায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
 
সারা দেশে চলা এসব ঘটনার প্রতিবাদে ভোর থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিতে শুরু করেন বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুপুর পর্যন্ত সাংবাদিকতা, ইতিহাস, ইংরেজি, উদ্ভিদবিজ্ঞান, এগ্রিকালচার, হিসাববিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্টসহ অন্তত প্রায় ২০টি বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোডে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা একটি মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে আগামীকাল একইভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বেলা সাড়ে ১১টায় মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে? আমি কে? আছিয়া আছিয়া’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর র‌্যাপিস্ট’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে বিচার কর’, ‘খুনি কেন বাহিরে, ইন্টেরিয়ম জবাব চাই’, ‘বিচার বিচার চাই, ধর্ষকের বিচার চাই’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’ প্রভৃতি স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।  

বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আজকে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো বন্ধ করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের শাসনকার্য পরিচালনার অধিকার রাখে না। এই দেশের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার হাসিনাকে সরাতে পারলে ধর্ষকদেরও এই বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করার ক্ষমতা রাখে। আজকে শিক্ষার্থীদের জনসমুদ্র আরেকটি জুলাইয়ের ইঙ্গিত করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাচ্ছি না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনায় যদি কোনো বিচার করতে না পারেন, তাহলে শেখ হাসিনার অবস্থাটা মনে করিয়ে দিতে চাই। আমাদের যেন আবার ১ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামতে না হয়। আমাদের বোন আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা, ইন্টেরিম এড়াতে পারে না। শুধু আছিয়া নয়, এতদিন যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে সব ঘটনার বিচার করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের বোনদের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমাবেশ

এদিকে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে নারী নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, শাসকদের দায়িত্বহীন আচরণ। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে এমন বিচারহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতা কখনোই কাম্য নয়। সবাইকে নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস এতদিন নীরব ছিল, কোনো আওয়াজ পাচ্ছিলাম না। কিন্তু গতকাল রাত থেকে ক্যাম্পাসে যেভাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, ছাত্রীরা যেভাবে হল থেকে বেরিয়ে এসেছে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা দীর্ঘদিনের, এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়।’

তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ভেবেছিলাম নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে- তা আমরা দেখতে পারছি না। যে দেশে নিপীড়ককে ফুল-পাগড়ি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়, সে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা ঠিক আছে তা আমাদের বুঝতে বাকি নেই।’

নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা। তিনি বলেন, ‘আট বছরের আছিয়া পরিবারের আশ্রয়ে ঘরের মধ্যেই ধর্ষিত হয়েছে। তাহলে নারী কোথায় নিরাপদ?  রাস্তায় না, দোকানে না, ঘরে না, কোথাও নিরাপদ নন। এখন আসলে নারীর অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। প্রতিটা ঘটনা এই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, নারীকে অস্তিত্বহীন করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা নারীরা ঘর-রাস্তা কোনো জায়গা ছাড়ব না। আমরা কথা বলব ও প্রতিবাদ গড়ে তুলব।’

সমাবেশে সঞ্চালনা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন ও সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হাবিব জাকারিয়া, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শ্রুভ্রা রানী চন্দসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত