প্রতিদিন বিনামূল্যে ৭০০ রোজাদারের ইফতার

| আপডেট :  ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৭  | প্রকাশিত :  ১২ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৭

এক ছাদের নিচে প্রতিদিন বিনামূল্যে ৬০০-৭০০ রোজাদার মুসল্লি ইফতার করছেন। এক প্লেটে একসঙ্গে চারজন পাশাপাশি বসে মিলেমিশে সেই ইফতার ভাগাভাগি করছেন। তা-ও আবার এক দিন বা দুই দিন নয়, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে। অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে প্রতি রমজান মাসের রোজার চিত্র এটি। এমন সম্প্রীতির পরিবেশ দেখা মেলে বগুড়া শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে। 

এখানে ধনী-গরিব, শ্রেণি ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে সাতশ মানুষ ইফতারে মিলিত হন। কেউ কাউকে চেনেন না। অথচ পাশাপাশি বসে ইফতার করছেন। সবার পরিচয় একটাই, তারা সবাই রোজাদার মুসল্লি। এক প্লেটের চারদিকে চার মুসল্লি বসে ভাগাভাগি করে ইফতার সারেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জোহরের নামাজের পর থেকে মসজিদে স্বেচ্ছাসেবীদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা প্লেটে ইফতারসামগ্রী সাজাতে শুরু করেন আসরের নামাজের পর। প্লেটে খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি, বেগুনি, জিলাপি, বিরিয়ানি বা খিচুড়ি ও শরবত থাকে। ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে থেকেই মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে বসতে শুরু করেন।

ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মুসল্লিদের হাতে হাতে ইফতারির প্লেট তুলে দেন মসজিদের খাদেম ও স্বেচ্ছাসেবকরা। ইফতারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত রোজাদারদের হাতে প্লেট পৌঁছে দেওয়া হয়। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইফতার।

জানা গেছে, প্রতিদিন সোয়া মণ সুগন্ধি চাল এবং ১০ থেকে ১৫ কেজি গরুর মাংসের বিরিয়ানি রান্না করা হয়। এজন্য বাবুর্চি নিযুক্ত করা আছে। বিরিয়ানির সঙ্গে ছোলা, বুন্দিয়া, জিলাপি, খেজুর, মুড়ি, তরমুজ ও শরবত দেওয়া হয়। রমজান শুরুর আগেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মুসল্লিরা ইফতার তহবিলে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দেন। এবার এখন পর্যন্ত ইফতার তহবিলে সাড়ে ২৬ লাখ টাকা জমা হয়েছে। 

দেড় যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে এমনভাবে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে জানিয়ে মসজিদের খাদেম মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ১৮ বছর ধরে মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় একসঙ্গে ইফতারের এমন উদ্যোগ চলে আসছে। এতে শুধু রোজাদারদের সেবা হচ্ছে না; ধনী-গরিব একসঙ্গে ইফতারের মাধ্যমে রোজার প্রকৃত শিক্ষা নিজেকে আত্মশুদ্ধি করা ছাড়াও সাম্য প্রতিষ্ঠা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধের অনন্য উদাহরণ তৈরি হচ্ছে।

মসজিদে ইফতার করতে আসা রিকশাচালক আলম মিয়া বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে যে উপার্জন হয়, সেখান থেকে ভালোমানের ইফতারি খেতে গেলে ১০০ টাকা চলে যায়। তাই এখানে যেহেতু ইফতারি পাওয়া যায়, এজন্য এখানে এসেছি। তা ছাড়া এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। এক প্লেটে চারজন বসে ইফতার করতে অন্য রকম ভালো লাগে। সবাই পাশাপাশি বসে ইফতার করছি। এটা খুব ভালো লাগে’। 

সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘মেসে থাকি। প্রতিদিন এই মসজিদে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে আসি। এখানে এক প্লেটে চারজন ভাগাভাগি করে ইফতার করার অনুভূতি অন্যরকম। এটা শুধু একসঙ্গে ইফতার নয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ’।

মুদি দোকানি আজমল বাহার বলেন, ‘যাদের ইফতারির সামর্থ্য নেই, তারাও এখানে এসে ইফতার করতে পারেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ’। 

মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল হোসেন বলেন, ‘২০০৮ সালে বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে নামাজ আদায় শুরু হয়। ওই বছরের রমজান মাস থেকেই মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে একসঙ্গে ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে হিসেবে ১৮ বছর ধরে মসজিদে ইফতারের আয়োজন চলছে। তবে মাঝে মহামারি করোনার কারণে দুই বছ এ উদ্যোগ বন্ধ ছিল।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত