চেয়ারে শহীদদের স্বজনেরা, মেঝেতে বসেন ৫ উপদেষ্টা

| আপডেট :  ১৫ জুলাই ২০২৫, ০২:৩০  | প্রকাশিত :  ১৫ জুলাই ২০২৫, ০২:৩০

জুলাই শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ নতুন রাস্তা সড়ক সংলগ্ন এলাকায়। এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা।

এ সময় সেখানে মঞ্চে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখা গেছে। অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে চেয়ারে বসানো হয় জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া পরিবারের স্বজনদের। আর তাদের নিচে মঞ্চের মেঝেতে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা। উপদেষ্টাদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৩টায় স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন দৃশ্যটি দেখা যায়। এ সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়, পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। ২১ জন শহীদের নামে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করার আগে উপদেষ্টারা শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে ফুল দিয়ে কুশল বিনিময় করেন।  

অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি, বর্তমান সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা মামলা করেছে, তাদের স্থানীয়ভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনকে অনুরোধ করব তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। লুটেরা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।

উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহীদ হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বৈষম্যবিরোধী দেশ পেয়েছি। তাদের পরিবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাদের সম্মানেই নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা শুরু হলো। তারা বন্দুকের মুখে যদি নির্ভীক দাঁড়িয়ে না থাকতো তাহলে আজ স্বাধীনতা আসত না।

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, সাড়ে ১৫ বছরে দীর্ঘ সংগ্রামে অনেকে নিপীড়ন, গুম, আয়না ঘরে বন্দি হয়েছিল। ’২৪ এর জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশের মানুষকে জাগ্রত করেছিল। আপনারা অগ্নি সময়ের সন্তান। দেশে কোনো আধিপত্য শক্তি আসার চেষ্টা করলে দেশের মানুষ তা দমন করবে।

অনুষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদ আদিলের মা তার বক্তব্যে সন্তানের স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি তার ছেলেসহ সকল শহীদদের বিচার চেয়ে তাদের কবর সংরক্ষণের দাবি জানান।

স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে উল্লেখ করা ২১ জন শহীদ হলেন- রিয়া গোপ, মো. রোমান, আরমান মোল্লা, মো. ইরফান ভূইয়া, মো. তুহিন, মো. মোহসীন, মো. জনি, ইব্রাহিম, মো. স্বজন, মো. আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, ছলেমান, ইমরান হাসান, হজরত বিল্লাল, সফিকুল, মো. সজল, মো. মাবরুর হুসাইন, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান, মোহাম্মদ সাইফুল হাসান ও আহসান কবির।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত