পিটার হাস এখন কোথায়
কক্সবাজারে নয় বরং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত থাকা সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি সর্বশেষ গত ৭ এপ্রিল ঢাকায় আসেন পরে গত ১১ এপ্রিল ভোর ৪টা ৫মিনিটে একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর তিনি ঢাকায় আসেননি বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজবে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কক্সবাজারে অবস্থান করছেন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তবে এই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন সূত্র, ইমিগ্রেশন বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ওয়াশিংটনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে জানায়, পিটার হাস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। তিনি গত দুই মাস ধরেই ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন জানিয়ে সূত্রটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে অংশ নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন পিটার হাস। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে আটলান্টিক কাউন্সিল আয়োজিত গ্লোবাল এনার্জি ফোরামে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।
ঢাকায় তার অনুপস্থিতির বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করে ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের উপস্থিতি নিয়ে ছড়ানো গুজবের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। পিটার হাস এপ্রিলে ঢাকায় আসার পর তিনি তিনদিন পরেই ফিরে গেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ইমিগ্রেশন ক্রস করেছেন এমন তথ্য আমরা যাচাই করে পাইনি। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, পিটার হাসের কূটনৈতিক পাসপোর্ট নাম্বার অকার্যকর। গত এপ্রিলের পর হাসের আর ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের রেকর্ড তাদের কাছে নেই।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে পিটার হাসের সাথে দূতাবাসের কোনো সম্পর্ক নেই। এ নিয়ে দূতাবাসের মুখপাত্র আশা বে বলেন, পিটার হাস এখন একজন বেসরকারি নাগরিক এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার কোনো রাজনৈতিক বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
তবে এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে জানায়, তিনি যে কোম্পানির হয়ে কাজ করছেন তা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি কোম্পানি। এক্সিলারেট এনার্জি ইনকরপোরেশনের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছেন তিনি এবং এই কোম্পানির বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশের দুটি এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। একটি টার্মিনাল কক্সবাজারের মহেশখালীতে, যা তারা নিজেরাই পরিচালনা করে। অন্যটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোর অংশ। এই টার্মিনালগুলো বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও সরবরাহ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পিটার হাস এই কোম্পানির হয়ে জ্বালানি, বাজার সম্প্রসারণ ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় নিয়ে কাজ করছেন। চট্টগ্রামে সরাসরি উপস্থিতি না থেকে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসেই এক্সিলারেটের আন্তর্জাতিক কৌশল ও নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখছেন। তার কাজ মূলত ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণ, বাজার সম্প্রসারণ এবং সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়—যা দূর থেকে করা সম্ভব ফলে দীর্ঘদিন তার অনুপুস্থিতে এক্সিলারেটের বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাতে সমস্যায় পড়ছে না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে নীতিগত সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
পিটার হাসের এপ্রিলের ঢাকা সফর
গত এপ্রিলে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সফর সম্পন্ন করেন। সফরে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিষয়ক মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে ব্যবসায়িক সম্পর্ক, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। পিটার হাসের সর্বশেষ সফরটিতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথেও সাক্ষাত করেন এবং নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত