অফিস টাইমে ব্যক্তিগত কাজ ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
কর্মস্থল মানুষের দায়িত্ববোধের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। দায়িত্ব পালনে সততা ও নিষ্ঠা একজন কর্মীর ব্যক্তিত্বকে মূল্যবান করে তোলে। অন্যদিকে দায়িত্বহীনতা সবখানে অপছন্দনীয়।
অফিস টাইমে অর্থহীন কথাবার্তা বা ব্যক্তিগত কাজে সময় ব্যয় করা একটি গুরুতর দায়িত্বহীনতা। কিছু কর্মী খাবার খাওয়া, চা খাওয়ার বা অসুস্থতার অজুহাতে দীর্ঘ সময় অপচয় করেন, যা প্রকৃতপক্ষে কাজ ফাঁকি দেওয়ার শামিল।
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনে অবহেলা একটি বড় অন্যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি : ৬৬৫৩)। অর্থাৎ কর্মস্থলের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা আমানত রক্ষার অংশ।
ইসলাম ধর্মের শিক্ষা অনুসারে, অফিসের সময় ব্যক্তিগত কাজে মগ্ন হওয়া দায়িত্বের খেলাপ এবং অনুচিত। কাজ করে উপার্জন করা হালাল এবং ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য এটি প্রধান শর্ত। দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমেই উপার্জন হালাল হয়। আর হালাল উপার্জন করা ফরজ এবং ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত।
ফলে এটি শুধু নামাজ, রোজা ও হজের মতো ইবাদতই নয়, বরং এসব ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন জরুরি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হালাল উপার্জন করা, অন্যান্য ফরজ আদায়ের পর আরেকটি ফরজ। (তাবরানি ও বায়হাকি)।
কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর দেওয়া উত্তম রিজিক অনুসন্ধান করো।’ (সুরা জুমা : ১০)। নবীজি (সা.) বলেছেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্য সর্বোত্তম (বায়হাকি)।
তাই অফিসের দায়িত্বে অবহেলা করা শুধু খেয়ানত নয়, এটি উপার্জনকে হারাম করে। অফিসের সময় ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকলে আমানতের খেয়ানত হয়। নবীজি (সা.) হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দায়িত্বে খেয়ানতকারী কেয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠবে (মিশকাত)।
তবে, কর্মীদের প্রতি অন্যায় আচরণও ইসলামে নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ : ২৪৩০)। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত কর্মীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।
কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন ইমানের অংশ। ব্যক্তিগত কাজের জন্য অফিসের সময় ব্যবহার করলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে অনুচিত এবং উপার্জনে প্রভাব ফেলে। সততা ও ন্যায্যতা বজায় রেখে হালাল উপার্জনে সচেষ্ট হওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত