রেকর্ডসংখ্যক মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার যুক্তরাজ্যে
গত বছর আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে যুক্তরাজ্যে, যা দেশটিতে অপরাধের হার বৃদ্ধির একটি উদ্বেগজনক চিত্র উপস্থাপন করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সমস্যার সমাধানে সরকারকে কার্যকর নীতিগত সংস্কারের প্রয়োজন এবং অপরাধের প্রতি কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজমের (এনআরএম) মাধ্যমে ১৯,১২৫ জনকে আধুনিক দাসত্বের সম্ভাব্য শিকার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এটি ২০২৩ সালের ১৭,০০০ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
আধুনিক দাসত্বের ধরন এবং শিকার
আধুনিক দাসত্বের শিকারদের মধ্যে রয়েছে মানব পাচার, যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক শ্রম, গাড়ি পরিষ্কার, গৃহস্থালি কাজ, শখের দোকান, সেলুনের কাজ ও সামাজিক পরিচর্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভিবাসন বাড়ছে এবং এই অভিবাসনের শিকার মানুষগুলো একাধিক ধরনের শোষণের শিকার হচ্ছেন।
শিশুদের শোষণ
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আধুনিক দাসত্বের শিকারদের মধ্যে ৩১% বা প্রায় ৬,০০০ জন শিশু রয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কারণ ছোট বয়সের শিশুরা শারীরিক, মানসিক ও যৌনভাবে শোষণের শিকার হতে থাকে। সাধারণত, শিশুদের অবৈধ শ্রমে বাধ্য করা হয় এবং তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
শিকারদের জাতীয়তা
২৩% ব্রিটিশ নাগরিক, ১৩% আলবেনিয়ান এবং ১১% ভিয়েতনামি নাগরিক আধুনিক দাসত্বের শিকার হয়েছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, অনেক বিদেশি নাগরিকও শিকার হচ্ছেন, বিশেষত আলবেনিয়া এবং ভিয়েতনাম থেকে। যুক্তরাজ্য এখন এই শোষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
শ্রম শোষণ
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩২% ভুক্তভোগী কাজের জায়গায় শোষণের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, তারা জোরপূর্বক, কম মজুরি ও অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে অনেক কম মজুরি পাচ্ছেন এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
যুক্তরাজ্যের আধুনিক দাসত্বের শিকারদের মধ্যে ৪৩% বলেছেন, তারা যুক্তরাজ্যের ভূখণ্ডে শোষণের শিকার হয়েছেন। আর ৪৪% জানিয়েছেন, তারা বিদেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, লিবিয়া, আলবেনিয়া এবং ভিয়েতনাম আধুনিক দাসত্বের শিকারদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য এবং সরকারের চ্যালেঞ্জ
ইলিয়ানর লিয়ন্স, যুক্তরাজ্যের দাসত্ববিরোধী ইনডিপেনডেন্ট কমিশনার, বলেন, এই পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যা নয়, এগুলো বাস্তব মানুষের জীবন এবং তাদের দুর্দশা। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক দাসত্বের বিরুদ্ধে একটি আন্তঃসরকারি কৌশল প্রয়োজন, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধ মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দিবে।
মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার সংস্থা জানায়, যুক্তরাজ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দাসত্বের শিকারদের এই সংখ্যা মোকাবিলায় সরকারের উচিত অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
যুক্তরাজ্যে আধুনিক দাসত্বের শিকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে উদ্বেগ বেড়েছে। শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে উঠবে।
আধুনিক দাসত্বের শিকার হাজারো মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারের তৎপরতা প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত