সৌরজগতে শনাক্ত হলো রহস্যময় ধূমকেতু
সৌরজগতে রয়েছে হাজার হাজার গ্রহ-নক্ষত্র। তারা নিজেদের আপন গতিতে চলাফেরা করছে। এর মধ্যে কোনো কোনো গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায় আবার কোনোটা অজানাই থেকে যায়। তবে এবার আমাদের সৌরজগতের বাইরে মিলেছে অজানা ধুমকেতু।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি হতে পারে আমাদের সৌরজগতের বাইরের তৃতীয় আগন্তুক বস্তু। যার নাম ‘৩আই/অ্যাটলাস’। এটি একটি সম্ভাব্য ইন্টারস্টেলার ধূমকেতু, যা প্রথম শনাক্ত করা হয় চিলির রিও হার্টাডো শহরে স্থাপিত অ্যাটলাস টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
নাসা জানিয়েছে, বস্তুটি প্রথম পর্যবেক্ষণে আসে ১৪ জুন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২ জুলাই তা প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই জ্যোতির্বিদরা এর কক্ষপথ, গতি ও উৎস নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। বস্তুটি বর্তমানে সূর্য থেকে প্রায় ৪১৬ মিলিয়ন মাইল দূরে এবং ধনু নক্ষত্রপুঞ্জের দিক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ কিমি গতিতে ছুটে আসছে।
এর কক্ষপথ অত্যন্ত বাঁকা ও খোলা প্রকৃতির (হাইপারবোলিক), যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে এটি সম্ভবত আমাদের সৌরজগতের বাইরের এক আগন্তুক। এর আগে মাত্র দুটি ইন্টারস্টেলার বস্তুকে শনাক্ত করা গিয়েছিল—২০১৭ সালের ‘উমুয়ামুয়া’ এবং ২০১৯ সালের ‘২আই/বরিসভ’।
ব্রিটেনের সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ড. মার্ক নরিস বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়, এটি হবে আমাদের শনাক্ত করা তৃতীয় ইন্টারস্টেলার বস্তু। এর মানে, গ্যালাক্সিতে এমন ‘ভ্রমণকারী’ বস্তুর সংখ্যা হয়তো আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি।’
প্রথমে বস্তুটির নাম ছিল আ১১পিএল৩জি, পরে সেটির মধ্যে ধূমকেতুর মতো বৈশিষ্ট্য দেখা গেলে এটি সি/২০২৫ এন১ (অ্যাটলাস) নামেও পরিচিত হয়। এর একটি ধোঁয়াটে আবরণ এবং একটি ছোট লেজ রয়েছে, যা সাধারণত ধূমকেতুর বৈশিষ্ট্য।
বস্তুটির আকার হতে পারে ২০ কিমি পর্যন্ত, যা সেই মহাকাশীয় শিলাটির চেয়েও বড়, যেটি পৃথিবীতে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ হয়েছিল। তবে নাসা আশ্বস্ত করেছে, এটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয়। বস্তুটি পৃথিবী থেকে কমপক্ষে ১.৬ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মাইল) দূরত্ব বজায় রেখেই চলবে।
এডিনবরার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কলিন স্নডগ্রাস বলেন, বস্তুটিকে বড় মনে হলেও, সেটির চারপাশে থাকা ধূলিকণা ও গ্যাসের কারণে আলোর প্রতিফলন বেশি হতে পারে। আসল বস্তুটি হয়তো আরও ছোট।
৩০ অক্টোবর নাগাদ এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি যাবে। তখন সেটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের ভেতর দিয়ে চলবে এবং তারপর আবার মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে।
রয়্যাল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোতির্বিদ জেক ফস্টার বলেন, `বর্তমানে এটি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, তবে ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের শুরুতে মাঝারি মানের টেলিস্কোপ দিয়েই এটি দেখা যাবে।’
যারা অপেক্ষা করতে চান না, তাদের জন্য ভার্চুয়াল টেলেস্কপ প্রোজেক্ট এই ধূমকেতুটিকে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে ইউটিউবে দেখানো হয়েছে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাত ১১টায় (যুক্তরাজ্য সময়) ।
বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে এই বস্তুটি এখন গবেষণার এক অনন্য সুযোগ। এবং জ্যোতির্বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি শুধু একটি ধূমকেতু নয় বরং বহির্জগতের রহস্য উন্মোচনের এক সম্ভাব্য চাবিকাঠি।
তথ্যসূত্র : নাসা, বিবিসি, রয়াল ওবসারভেটরি গ্রিনউয়িচ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত