ভারতীয় দম্পতিকেই বাংলাদেশি বলে পুশইন করল দিল্লি পুলিশ

| আপডেট :  ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৩  | প্রকাশিত :  ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৩

বাংলা ভাষায় কথা বলেন এই ‘অপরাধে’ দিল্লিতে বসবাসকারী পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার এক দম্পতি ও তাদের পাঁচ বছর বয়সী সন্তানকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে জোরপূর্বক সীমান্তে পুশইন করেছে দিল্লি পুলিশ।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে।

খবরে বলা হয়, গত ১৮ জুন রাজধানী দিল্লির রোহিণী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ২৬ বছর বয়সী দানিশ শেখ, তার স্ত্রী ২৪ বছর বয়সী সোনালী খাতুন এবং তাদের ছেলে সাবিরকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন, বৈধ পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ থাকা সত্ত্বেও কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোনালীর কাজিন রোশনি বিবি, যিনি দিল্লিতেই থাকেন, বলেন, ‘আমরা পুলিশের সঙ্গে দেখা করে তাদের বৈধ পরিচয়পত্র, জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র দেখিয়েছি। পুলিশ আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে যাচাই করে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কয়েকদিন পর জানানো হয় তারা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের বলা হয় যেন এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করি।’ 

রোশনি আরও জানান, কিছুদিন আগে সোনালী অন্য একজনের ফোন থেকে যোগাযোগ করে জানান, তারা বর্তমানে ঢাকার উপকণ্ঠে আছেন এবং স্থানীয় এক সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্যে কোনোমতে বেঁচে আছেন।

এই ঘটনার শিকার শুধু দানিশ ও সোনালী নন। রোশনি বলেন, তাদের গ্রামের আরও তিনজনকে একই সময়ে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার করে সীমান্ত পার করে দেওয়া হয়েছে।

এটি প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও মহারাষ্ট্রে কাজ করা সাতজন বাঙালি শ্রমিককে বিএসএফ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হস্তক্ষেপে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলছে। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলেন বলেই ভারতের বৈধ নাগরিকদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হয়রানি ও জাতিগত বৈষম্যের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।’

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সব তথ্য হাতে এসেছে। আমরা আইনত পদক্ষেপ নিচ্ছি। আদালতের মাধ্যমে দানিশ ও সোনালীদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’ সেইসঙ্গে তিনি দেশবাসীকে এ ধরনের অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানান।

এই ঘটনায় দিল্লি পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ শুধু সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনই নয়, বরং এক ভয়ংকর রাষ্ট্রীয় প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

গত মাসেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছিলেন, শুধু বাংলায় কথা বলার কারণে যারা জীবন-জীবিকার জন্য অন্য রাজ্যে যান, তাদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে সীমান্তে পুশইন করা হচ্ছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভাষাগত নিপীড়নের এক জঘন্য উদাহরণ।

একাধিক সূত্র বলছে, এই ঘটনায় দিল্লি পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে নাগরিকত্ব যাচাই করেনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারও বিষয়টি নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এভাবে নিরপরাধ ভারতীয়দের নিজেদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত