বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৩ নেতাকর্মী আহত
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত উপজেলার নিজামপুর কলেজ এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ৮ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন- উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা আরমান হোসেন (২০), মোহাম্মদ সুমন (৩৪), এমরান হোসেন (২২), মফিজুল ইসলাম (৩৪), শহীদুল্লাহ খানসাব (৬০), রাসেল (৩০), যুবদল কর্মী ইমন (২১), ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম (৩৮), যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন (৩৫), ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান ইমাম (৪৫), ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেন (২৬), সদস্য টিটু (৩৫) ও ছাত্রদল নেতা নাহিদ রায়হান চৌধুরী হিমেল (২০)।
ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সভাপতি গোলাম রহিম চৌধুরী স্বপন বলেন, বৃহস্পতিবার নিজামপুর বাজারে যুবদল কর্মী আরিফ শ্রমিক দল কর্মী মুরাদকে মারধর করে। এ বিষয়ে শুক্রবার যুবদল কর্মী টিটু আরিফকে জিজ্ঞেস করতে গেলে টিটুকেও আরিফের লোকজন মারধর করে আটকে রাখে। এ সময় খবর পেয়ে অন্য নেতাকর্মীরা গেলে তাদের ওপরও হামলা করেছে। এতে আমাদের ৬ নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির এক নেতার আশ্রয় নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এই হামলায় আমার ভাই হাসান ইমাম (৪৫) ও আমার ছেলে নাহিদ রায়হান চৌধুরী হিমেল (২০) গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এতে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফসহ অন্তত ৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। দলীয় বিশৃঙ্খলা যারা করেছে দলের রীতি অনুযায়ী তদন্ত করে বিচার হওয়া উচিত। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি নেতা স্বপনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার নেতৃত্বে ফরফরিয়া গ্রামের শামলাসি বাড়িতে ঘরে ঢুকে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কুপিয়েছে। মহিলাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আরমান নামে এক যুবদল কর্মীর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় এবং ছেলেকে বাঁচাতে এলে বাবা খানসাবকেও মারধর করে। আরমানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। মূলত স্বপন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, বিএনপির গ্রুপিংয়ের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। নিজামপুর এলাকায় ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে। আহত সবাইকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মাহমুদা জানান, মারামারির ঘটনায় আহত অবস্থায় ৫ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। আতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের সবার মাথা, হাত, পেট, কোমরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মিরসরাই থানার ওসি আবদুল কাদের বলেন, নিজামপুর এলাকায় মারামারির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, মিরসরাই উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দুটি গ্রুপে বিভক্ত। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিন গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত