বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের এ দিন তথা ৬ জুলাই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে সারাদেশ। এদিন রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই দাবিতে এই দিন দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল বিকেল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু হবে। শুধু শাহবাগ নয়, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ ঢাকার প্রতিটি পয়েন্টে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন। ঢাকার বাইরে জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করছে আমরা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। আমরা প্রমাণ করব, এই ধারণা ভুল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, প্রয়োজনে হরতালের ডাক দেব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এটি ফিরে আসায় আমরা জবাব চাই। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটা বৈষম্য দূর করতে হবে।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরলেও, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের হোয়াইট হাউসের সিঁড়িতে আগের রাতে আন্দোলনকারীরা এই কর্মসূচির নাম চূড়ান্ত করেন। বৈঠকে প্রতিটি পয়েন্টে কোন প্রতিষ্ঠান ও হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন, তা নির্ধারণ করা হয়। এসময় ঢাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে, এবং বোরহানুদ্দীন কলেজের শিক্ষার্থীরা চানখাঁরপুলে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।
ওইদিন বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের হয়। এটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশী বাজার যায়। এরপর সেখান থেকে আবার বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে বিক্ষোভ করে। এর আগেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে মূল মিছিল আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। মূল মিছিলটি চারুকলার সামনে আসলে অন্যরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
একই দিনে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।
৬ জুলাই ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁতিবাজার মোড় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিকেল পাঁচটায় ক্যাম্পাসে ফিরে যান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে তিনটায় বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন হলে গিয়ে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেয় এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোড থেকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ষোলশহরে অবস্থান নেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় রংপুরের মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত