‘বিআইটি মডেল’ বাস্তবায়ন দাবিতে উত্তাল ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি)’ মডেলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক স্বতন্ত্রতা নিশ্চিত করার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৫ জুলাই) ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল মোড়, গাঙ্গিনারপাড় মোড়ের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বর ও প্রেস ক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে তারা ঘোষণা দেন—দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।
ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সালমান সাব্বির, সিবাজী রায় ও ফাহিম মুনতাসির। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের বিশেষায়িত প্রকৌশল কলেজগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রকৌশল শিক্ষার উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে। কিন্তু সূচনালগ্ন থেকে এসব প্রতিষ্ঠান একাডেমিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হলেও প্রশাসনিকভাবে রয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে দ্বৈত কাঠামো, যা দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি করে চলেছে।
এই ব্যবস্থার ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে নানাবিধ জটিলতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলছে বলে দাবি তাদের।
গত ২০ মে থেকে বরিশাল, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে ‘একাডেমিক শাটডাউন’ কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সংকট দীর্ঘদিনের হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দাবি আদায়ে এরই মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
তাদের মূল দাবি—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে বিআইটি মডেলের একটি স্বায়ত্তশাসিত কমিশনের অধীনে প্রকৌশল কলেজগুলোকে আনয়ন এবং ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্বতন্ত্র একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামো বাস্তবায়ন।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, দাবি পূরণ না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন এবং এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। আন্দোলনের পেছনে আরও একটি বড় ঘটনা যুক্ত হয়েছে—গত ১৮ মে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকারের আত্মহত্যা। তার মৃত্যুর পর ২০ মে থেকে ছাত্ররা এই দাবিতে একযোগে আন্দোলনে নেমেছেন।
ঈদের পর ১৪ জুন কলেজ খোলার পরও শিক্ষার্থীরা পাঠ ও পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেননি। পরে ২৪ জুন প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানজুড়ে কার্যত অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘চলমান সমস্যার বিষয়ে আমরা উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, অচিরেই সমস্যার একটি সন্তোষজনক সমাধান হবে।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত