পাটের বাজার চড়া, খুশি কৃষক

| আপডেট :  ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪০  | প্রকাশিত :  ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪০

সপ্তাহ দুয়েক ধরে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার বাজারগুলোতে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার মণপ্রতি প্রায় এক হাজার টাকা বেশি দামে পাট বিক্রি করছেন কৃষকরা। এ ছাড়া এবার পাটের ফলন যেমন ভালো হয়েছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় জাগ দেওয়ার জন্য পানির অভাবও হয়নি। সব মিলিয়ে এবার পাটচাষিরা বেশ খুশি।

গত বছরের শুরুতে নতুন পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এবার কৃষকরা নতুন পাট বিক্রি করছেন মণপ্রতি ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এবার প্রতি মণে বাড়তি পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের চর শিশুয়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এবার পাটের ফলনও ভালো হইছে, আবার দামও ভালো পাইত্যাছি। এবার নতুন পাট বেইচ্যা মণে হাজার বারশ টাকা লাভ পাইত্যাছি। তয় এমন ভালো দাম কয়দিন থাকে কিডা জানে।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সূত্রে জানা যায়, ইসলামপুর উপজেলায় এবার ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার প্রতি বিঘায় গড়ে ৯ মণ ফলন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কৃষকরা। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় তেমন পরিস্থিতি হয়নি।

তবে কৃষকদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিশেষ করে এবার শ্রমিকপ্রতি খরচ বেশি পড়েছে। গত বছর দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া গেছে; কিন্তু এবার পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও ছাড়ানো বাবদ শ্রমিকপ্রতি দৈনিক ৮০০-৯০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। এতে গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষের খরচ প্রতি মণে দেড় থেকে দুশ টাকা বেড়েছে। গত বছর যেখানে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল, এবার তা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।

শুক্র ও সোমবার এই দুই দিন উপজেলার গুঠাইলে সাপ্তাহিক পাটের হাট বসে। এই হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটে দুই সপ্তাহ ধরে পাটের কেনাবেচা হচ্ছে। যেসব কৃষক মৌসুমের শুরুর দিকে পাটের আবাদ করেছিলেন, তারাই আগে ভাগে এসব বিক্রি করতে পারছেন। ফলে হাটগুলোতে চোখে পড়ার মতো পাটের সরবরাহ হয়নি।

গুঠাইল হাটে পাট কিনতে যান উপজেলার পলবান্ধা গ্রামের ব্যবসায়ী আবু তালেব। তিনি বলেন, এখন যত দিন যাবে, হাটে পাটের সরবরাহ ততই বাড়বে। তবে মৌসুমের শুরু হিসেবে হাটে মোটামুটি ভালোই পাটের সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে পাটের দাম (মণপ্রতি) ৩ হাজার ৯০০ টাকায় উঠেছিল। সে তুলনায় গতকালের হাটে মণে এক থেকে দেড়শ টাকা কমেছে। এরপরও যে দামে পাট বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষক খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।

তবে আগামী দিনে সরবরাহ বাড়লে পাটের দাম পড়ে যাবে কি না, এমন আশঙ্কায় আছেন কৃষকরা। গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন, লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনসহ পাঁচ-ছয় কৃষক জানান, বর্তমান দামে কৃষক খুশি হলেও আগামী দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। এখন বেশির ভাগ কৃষকই অল্প অল্প করে পাট কেটে সেই পাট জাগ দিয়ে ও শুকিয়ে বাজারে আনছেন। বাকি পাট বাজারে আনতে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে। অনেকের আবার এর চেয়েও বেশি দেরি হবে।

কৃষক ভালো দাম পেলে আরও বেশি জমিতে পাট চাষে আগ্রহী হবেন জানিয়ে ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘আবহাওয়া, ফলন ও দাম অনুযায়ী এবার কৃষক পাটচাষে লাভজনক অবস্থায় আছেন। আমাদের হিসাবে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি মণে কৃষকের ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। তবে এখনো হাটে পাটের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তিন-চার সপ্তাহ পরে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বোঝা যাবে দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াল।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত